শুক্কুর আলীর রিভিউ শুনানি সোমবার


প্রকাশিত: ০৮:৩৯ এএম, ০২ আগস্ট ২০১৫

মানিকগঞ্জের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শুক্কুর আলীর রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন সোমবার ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ প্রথম দিনের শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে শুক্কুর আলীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড ট্রাস্ট সার্ভিসের (ব্লাস্ট) এর আইনজীবী এম কে রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আইনজীবী এমকে রহমান বলেন, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায় দেয়ার সময় তার বয়স ছিল কম। তাই শুক্কুরকে সর্বোচ্চ দণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা ঠিক হয়নি। তাছাড়া আইনের যে দু’টি ধারায় বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ধারা দু’টিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সেহেতু তাকে দণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন শুক্কুর আলী মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। পরে মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০১ সালের ১২ জুলাই শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন বিচারিক আদালত।

বিচারিক (নিম্ন) আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল  করেন শুক্কুর আলী। কিন্তু হাইকোর্ট তার আবেদন খারিজ করে ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।

পরে ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন শুক্কুর আলীর পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী এবিএম বায়েজীদ। আপিল বিভাগ একই বছরের ৪ মে পুর্নবিবেচনার আবেদনও খারিজ করে দেন। রিভিউ খারিজের পর ২০০৫ সালে শুকুর আলীর মা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে একটি আবেদন জমা দেন।

এদিকে বিচারিক আদালত শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এক বছর আগে ২০০০ সালে জাতীয় সংসদ ১৯৯৫ সালের আইনটি বাতিল করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’২০০০ নামে আরেকটি আইন প্রণয়ন করে। ওই আইনে ধর্ষণের ফলে বা ধর্ষণের পর কাউকে হত্যা করা হলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শুক্কুর আলীর বিচার হয় ১৯৯৫ সালের আইনে। যে আইনে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধের শাস্তির বিধান ছিলো শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড।

এ বিষয়টিকে সামনে এনে শুক্কুর আলীর পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। তারা এক দেশে দুই আইনের এই বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এ সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় যেখানে শাস্তির বিধান ছিলো কেবল মৃত্যুদণ্ড তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ২ মার্চ ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।

পরে বিষয়টি আপিলে যাওয়ার পর গত ৫ মে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিলে। একইসঙ্গে শুক্কুর আলীর দণ্ডও বহাল রাখেন আদালত। শুক্কুর আলীর দণ্ড বহাল রাখা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে  রিভিউ পিটিশন দায়ের করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড ট্রাস্ট সার্ভিস।
 
এফএইচ/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।