ভোগান্তির সড়কে আশার খুঁটি

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ০৫ জুন ২০১৮
ছবি : মাহবুব আলম

আগারগাঁও-মিরপুর সড়ক। যে সড়কে থমকে যায় গোটা রাজধানী। মিরপুরবাসী এখন এই সড়ককে নরকযন্ত্রণাই জানেন। এই সড়কের একেবারে মধ্যখানেই বিশাল কর্মযজ্ঞ। কংক্রিটের প্রাচীর দিয়ে তাতে বড় বড় যন্ত্রে কাজ চলছে দিন-রাত।

মেট্রোরেলের কাজের জন্য মধ্য সড়কের অধিকাংশ জায়গা দখলে নেয়ায় ভোগান্তির অন্ত নেই এ পাড়ায়। একবার গাড়িতে উঠলে নামা অনিশ্চিত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। অসহনীয় যানজট নিয়েই মিরপুরে সকাল শুরু। যানজট থাকছে মধ্য রাতেও। যানজটের কবলে পড়ে অনেকে মিরপুর এলাকা ছেড়েও দিচ্ছেন।

আর বৃষ্টি হলে তো সড়কেই ঢেউ খেলে। পানি নিষ্কাশন প্রায় বন্ধ। বন্ধ হয়ে যায় মানুষের চলাচলও। যানজট আর জলজট একাকার হয়ে দুর্বিষহ করে তুলছে মিরপুরের জীবন। সম্প্রতি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ সড়কে নৌকাও চলতে দেখা যায়। বাসিন্দারা পারলে এখন এড়িয়ে চলেন মিরপুরের এ রাস্তা।

road

চলাচলের অযোগ্য আর নানা বদনামের মাঝেও আশার খুঁটি দাঁড়িয়েছে এ সড়কে। স্বপ্নের মেট্রোরেলের পিলার দুটি আশা জাগানিয়া অন্য এক বাংলাদেশের কথা বলছে। সগৌরবে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের হাতছানি দিচ্ছে।

মাত্র দুটি পিলার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পেরিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উত্তর কোনায় আসতেই যে কারো নজর কাড়বে। সুন্দর নকশায় পূর্ণতা দেয়া হয়েছে এ সপ্তাহেই। তাতেই যেন যাত্রী মনের ভোগান্তি খানিক উবে যাচ্ছে। তীব্র যানজট মাড়িয়ে পিলার দুটির কাছে আসতেই স্বস্তি মিলছে প্রাণে প্রাণে। অপেক্ষা এখন দুই পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের মধ্যে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করার কথা রয়েছে। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। পরে ভূমি অধিগ্রহণের বিশেষ বিধান রেখে মেট্রোরেল সংক্রান্ত আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

road

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এমআরটি (ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। ২০১৬ সালের ২৬ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোট ২৮ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে রাজধানীতে। রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে মেট্রোরেল, ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী।

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ২০ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে ৭৭০টি স্প্যান বসবে। গত ৭ এপ্রিল উত্তরার দিয়াবাড়িতে দুটি পিলারকে যুক্ত করে মেট্রোরেলের প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়।

এএসএস/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।