‘হায়রে কপাল সকালের বৃষ্টির পানি দুপুরেও নামছে না’

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ৩১ মে ২০১৮

‘বিনা পয়সায় পদ্মা মেঘনার ঢেউ দেইখ্যা যান, অ্যাই যে কত্ত বড় ঢেউ। হেলায় সুযোগ হারাইবেন না।’

বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের উত্তর গেটের অদূরে দাঁড়িয়ে একজন রিকশাচালক হাসান আলী ঠাট্টাচ্ছলে অপর এক রিকশাচালককে এ কথাগুলো বলছিলেন।

jagonews24

অদূরেই হৃদয় নামে ১০/১১ বছরের এক শিশু ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘পানি পার, মাত্র পাঁচ টাকা, এক্ষুনি ছাইড়া দিমু’ বলে লোকজনকে ডাকাডাকি করছিল। ৭/৮ বছর বয়সী তার ছোট বোন আরিফা শুকনা কাপড় দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ভ্যানের পাটাতন পরিষ্কার করছিল।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের দু’জন ছাত্রী সাহস করে রাস্তার ডিভাইডার ধরে ধরে পায়ে হেঁটে নীলক্ষেত মোড়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে হৃদয়ের ভ্যানগাড়িতে চেপে বসে উষ্মা প্রকাশ করে বলছিলেন, হায়রে কপাল , সকালের বৃষ্টির পানি দুপুরেও নামছে না।

jagonews24

এ প্রতিবেদক নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য দেখতে পান। আবহাওয়া অধিদফতরের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে আজ ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আরও পড়ুন : ৩ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত

বৃষ্টির কারণে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর গেটের একটু সামনে থেকে নিউমার্কেট এক নম্বর গেটের একটু আগ পর্যন্ত রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়।

এ রাস্তা দিয়ে পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, নবাবগঞ্জ ও হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর, বিভিন্ন মার্কেটের কর্মচারীসহ নিম্নআয়ের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। প্রধানত তারা পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যান।

jagonews24

কিন্তু আজ সাত সকালের বৃষ্টির কারণে তারা মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের অনেকেই জামা-কাপড় ভিজিয়েই নিউমার্কেট পার হন। তবে এ পথে বেশিরভাগ মানুষ সকালে জনপ্রতি ১০ টাকা ও ১১টার পর থেকে ৫ টাকায় পানি পার হন।

সরেজমিনে ১১টার সময় নিউমার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারগুলো পানি কেটে সামনে এগুচ্ছে। এর ফলে ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। আজিম নামের এক সিএনজিচালক জানান, পানি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে।

সড়কে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে ডিএসসিসির কর্মচারীদের পানি নামানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়।

jagonews24

ক্ষুদে ভ্যানচালক আরিফ জানায়, ভ্যানটি তার ভাত বিক্রেতা মামার। এ ভ্যান দিয়ে তার মামা ভাত টানে। ওরা দুই ভাই-বোন মামার কাছে আবদার করে ভ্যানটি নিয়ে এসেছে। বেশ ভালোই রোজগার হচ্ছে বলেও জানায় আরিফ।

নিউমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী জানান, একটু বেশি বৃষ্টি হলে তাদের ব্যবসা লাটে ওঠে। এই ঈদের বাজারেও দুপুর ১২টার সময় কোনো ক্রেতার কাছে একটাকাও বিক্রি করতে পারেননি।

এমইউ/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।