‘আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ৩০ মে ২০১৮

>> মাদক নির্মূলে অভিযান চলবে
>> ১০ হাজারের বেশি গ্রেফতার
>> অন্যায় কিছু ঘটলে বিচার হবে
>> লবিস্ট নিয়োগ করে নোবেল নয়
>> রিজভীকে এক বালতি পানি পাঠান

চলমান মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। মাদকের কোনো গডফাদারই ছাড় পাবে না। সে যে বাহিনীরই হোক না কেন।’ তিনি বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিরীহরা মরছে না। দীর্ঘদিন থেকে নজরে রাখা হয়েছে মাদক পাচার ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতের। মূলত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

মানবাধিকারকর্মীদের অব্যাহত সমালোচনার মধ্যেও মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। চলমান অভিযানে নিহতের ঘটনাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন তিনি। মাদক নির্মূল অভিযানে নিহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে উদ্বেগ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মাদক নির্মূল অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় তাদের উদ্বেগ জানান।

বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে সাংবাদিকরা এ অভিযান নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদক সমাজে একটা ব্যাধির মতন। আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন মাদকের বিরুদ্ধে। আবার আজকে যখন অভিযান চলছে তখন কোনটা কীভাবে কী হচ্ছে সেটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার শুরু করেছেন। কোনটা চান অভিযান চলুক, না কি বন্ধ হয়ে যাক?’

আরও পড়ুন >> একরামসহ সব হত্যার নির্বাহী তদন্ত হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের কারণে সমাজে আজ হাহাকার বইছে। মাদকের কারণে ছেলের হাতে বাবা, মেয়ের হাতে মা খুন হচ্ছেন। মাদক নিয়ে মিডিয়ায়ও তো তোলপাড়। তাহলে আজ অভিযান নিয়ে কেন এমন বিরোধিতা হচ্ছে। অভিযানে কোনো নিরীহ মানুষ মরছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দুকযুদ্ধে কেউ মারা গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরই বা কি করার আছে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলার সময়েই অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন। সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এই মাদকের বিরুদ্ধে। কোনটা চান? অভিযানটা চলুক না বন্ধ হয়ে যাক? ১০ হাজারের ওপর এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। মাদক যারা পাচার করে তাদের ধরতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটতে পারে। আইনগত দিক থেকে এটা ঠিক না, কিন্তু একটা অপারেশনে গেলে তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন >> মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে যদি কেউ কিছু করে থাকে সেটার কিন্তু বিচার হয়। আপনারা একটা ঘটনা দেখান যে একজন নিরীহ মানুষ শিকার হয়েছে। একটা অভিযান করতে গেলে, একটা ঘটনা ঘটলে যদি সেটাকে বড় করে দেখান, তাহলে কি অভিযানটা বন্ধ করে দেব? আজ সারা দেশের ঘরে ঘরে হাহাকার এই মাদকের জন্য। তার বিরুদ্ধে অপারেশন করা যাবে না? এই ধরনের একটা অভিযান করতে গেলে এ ধরনের দু/একটি ঘটনা ঘটতেই পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কাকে গডফাদার বলছেন সেটা আমি জানি না। যারা জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন যাবৎ এটা নিয়ে কাজ করেছে। হঠাৎ করে এ অভিযান শুরু হয়নি। সমাজে কিন্তু এখন শান্তি ফিরে এসেছে। বুধবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জিয়া কিভাবে নির্বাচন করেছে তা কি মনে নেই?

আগামী নির্বাচন নিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দাবি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বদু (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) কাকার কি মনে নাই জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা নিয়েছিলেন, তখন যে হাঁ/না ভোট দিয়েছিলেন, সেই নির্বাচনটা উনি কেমন দেখেছিলেন? এদের মুখে ভোটের কথা শুনলে, পাগলেও হাসবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবেই হবে। নির্বাচন আমি করব না, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, সংবিধানে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা আছে, সেভাবেই হবে। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও এর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই অপকর্ম যারা করেছে, তারা নির্বাচনে আসলো কী আসলো না, এটা নিয়ে এত হা-হুতাশ কেন? তিনি বলেন, বিএনপির আমলে পুলিশ যখন বদু কাকাকে ধাওয়া করেছিল আর উনি যখন রেললাইন ধরে দৌড়াচ্ছিলেন সে চিত্র তো বাংলাদেশের সব মানুষই দেখেছে। তখনকার কথা কি উনি ভুলে গেছেন?

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কোর্ট মুক্তি না দিলে আমি কি জেলের তালা ভেঙে তাকে নিয়ে আসবো? তাছাড়া আমি তো তাকে জেলে দেইনি। জেলে দিয়েছে আদালত। তিনি বলেন, ওনার মুক্তি চাইতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় মামলা হয়েছে, আমি তো মামলা দেইনি। মামলা দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১০ বছর মামলা চলার পরে রায় হয়েছে। সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশন আছে, তারা আলাপ-আলোচনা করছে। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে তারা আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি তো অনেক বোঝে, তাহলে আর বলার দরকার নাই। তারাও তো কম যায় নাই। খালেদা জিয়া কি ভারতে যায় নাই? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার দুই বছরের মধ্যেই ভারতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন, ক্ষমতা দখল করেই ভারত গিয়েছিল।বিএনপি এখন তিস্তার পানির কথা বলে। বিএনপি নেতাদের কি মনে নাই, উনাদের নেত্রী ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাকে ক্ষমতায় আনবে কি আনবে না, সেটা জানি না। ২০০১ সালে আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করেছিল এখানে, আমি কিন্তু রাজি হইনি। খালেদা জিয়া লিখে দিয়ে এসেছিল। আমি বলেছিলাম— গ্যাসের মালিক এ দেশের জনগণ। মুচলেকা লিখে দিল গ্যাস বিক্রি করবে ক্ষমতায় এলে। আমি শুধু বললাম— আল্লাহ্ মন বুঝে ধন দেয়। অন্য

ঢাকায় জলাবদ্ধতা রোধে বক্স কালভার্ট ভেঙে নৌ-চলাচলের পরিকল্পনা

ঢাকা শহরের বক্স কালভার্ট ভেঙে খাল করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খালের উপরে রাস্তা, নিচে খাল ও খালের ওপর নৌকা চলবে। যেখানে খাল ছিল সে খাল আবার উদ্ধার করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে পানি সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে বক্স কালভার্ট ভেঙে খাল করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা এবং তার ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা পানি চুক্তির জন্য ভারতের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করে বাংলাদেশ বসে নেই। আমি কোনো কিছুতেই কারও ওপরই ভরসা করে চলি না। আমার দেশের পানির ব্যবস্থা কীভাবে করতে হবে— সেটা আমি করে যাচ্ছি। নদী ড্রেজিং করছি। জলাধার তৈরি, পুকুর খনন করছি। পানি যাতে ধরে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করছি।

তিস্তাচুক্তি প্রসঙ্গে ভারতের আশ্বাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারা কথা দিয়েছে। এজন্য অপেক্ষা করেন। আর তাদের পানি না নিয়ে কি আমাদের চলবে না? আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থা করছি। পানির সমস্যা যাতে নিজেরা সমাধান করতে পারি, সেই ব্যবস্থা করছি। তিস্তাচুক্তি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা মমতার বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা করছে। এই বিকল্প প্রস্তাবটি কী, আমরা জানি কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সব কথা এখন জানার তো দরকার নেই। আর এটা তাদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তাব। তারা বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে। তাদের প্রস্তাব তাদের ওখানে থাকতে দেন। দরকার হলে তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

এবারের সফরে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম বাংলাদেশ ভবন স্থাপন করতে, কাজেই সেটার ওপর জোর দিয়েছিলাম। তিস্তার বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন আছে। তারা আলোচনা করছে।

যে কোনো দুর্যোগে কৃষক সহযোগিতা পাচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষককে যে ভর্তুকি দেই সেটা অসম্মানের নয়। টাকাটা কৃষকের সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। কৃষককে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই কোটি কৃষককে কার্ড দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা যাবতীয় কৃষি উপকরণ পাচ্ছে। আমাদের সরকারই প্রথম ৯৬ সালে এসে কৃষকদের জন্য বিশেষ করে যারা বর্গা চাষি তাদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া শস্য বীমার কথাও আমি ভাবছি। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

শাইখ সিরাজ দুর্যোগের কারণে কৃষকের শস্যবীমার কথা বললে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে কোনো দুর্যোগে আমরা কৃষককে সহযোগিতা করে থাকি। বন্যা, খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে আমারা কৃষককে সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করি। তিনি বলেন, এক সময় খালেদা জিয়া ব্যাংক বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আমরা যখন ক্ষমতায় যাই তখন আমরা কৃষি ব্যাংককে কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে যাই। সারাদেশে সমানভাবে অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য গড়ে তোলার জন্য এমন ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, কৃষক ব্যাংকে যাবে না। ব্যাংক যাবে কৃষকের কাছে। তখন মাইক্রোবাসে করে টাকা নিয়ে গ্রাম-গঞ্জে কৃষককে ঋণ দেয়া হয়েছে। আবার অনুরূপভাবে ঋণ আদায়ও করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাছের খামারে বড় ধরনের দুর্যোগ হলে সেটাও দেখা হবে।

লবিস্ট রেখে নোবেল পুরস্কার নিতে চাই না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নোবেল পুরস্কার দরকার নেই। এ ধরনের প্রবৃত্তি আমার নেই। এছাড়া লবিস্ট রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্যও আমার নেই। আর লবিস্ট রেখে নোবেল পুরস্কার নিতে হবে এটার দরকার নেই। এ প্রক্রিয়ায় নোবেল চাই না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু বা লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার এর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নোবেল নিতে যদি টাকা খরচ করতে হয় সে টাকা সেখানে নয়, প্রয়োজনে গরিবদের দিয়ে দেব। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা কী কী খাবে সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। রোজায় যাতে তারা নিয়মিত চাল ডাল পায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের নগদ টাকা দেয়া হবে, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

আমি কোনো প্রতিদান চাই না

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কোনো প্রতিদান চান না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘ক্ষমতায় আসতে নরেন্দ্র মোদির কাছে প্রতিদান চান শেখ হাসিনা’ ভারতের একটি দৈনিকের বরাদ দিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোনো প্রতিদান চাই না। তাদের (ভারত) অনেক দিয়েছি। আমার দেয়ার পরিমাণ বেশি, নেয়ার পরিমাণ কম। ভারতের উত্তরপূর্বে সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে। ভারত এটি বুঝতে পারে এখন। কিন্তু তার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
তবে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিস্তার পানি প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ কেন নির্মাণ করা হলো? ব্যারেজ করে কেন এখন পানি ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে? আগের সরকারগুলোর কাছে এর জবাব কী?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা এ নিয়ে আলোচনা করছে। আমি নিজের প্রতি ভরসা রাখি। প্রতিটি নদী খনন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো একটি বিষয় নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। তাই বলে বারবার একই বিষয় তুলে দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে তিক্ততা আনতে চাই না।

রিজভীকে এক বালতি পানি পাঠান

প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে (রিজভী) এক বালতি পানি পাঠাতে।

শেখ হাসিনা বলেন, ওরা তো বললো আমি এক বালতি পানিও আনতে পারিনি। এক বালতি পানি রিজভীকে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। একজনকে দায়িত্ব দাও ওকে কয়েক বোতল পানি পাঠিয়ে দিক। রোজার মাস, কাজে লাগবে।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো অনেক বোঝে তাহলে আর বলার দরকার নাই। তারাও তো কম যায় নাই। খালেদা জিয়া কি ভারতে যায় নাই? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার ২ বছরের মধ্যেই ভারতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন, ক্ষমতা দখল করেই ভারত গিয়েছিল। বিএনপি এখন তিস্তার পানি কথা বলে, বিএনপি নেতাদের কি মনে নাই উনাদের নেত্রী ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে গিয়েছিলেন?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাকে ক্ষমতায় আনবে কী আনবে না সেটা জানি না। ২০০১ সালে আমেরিকান কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করেছিল এখানে, সেই গ্যাস বিক্রি করবে ভারতের কাছে। আমি কিন্তু রাজি হয়নি, খালেদা জিয়া লিখে দিয়ে এসেছিলে। আমি বলেছিলাম গ্যাসের মালিক এ দেশের জনগণ।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুচলেকা লিখে দিলো গ্যাস বিক্রি করবে ক্ষমতা এলো। আমি শুধু বললাম আল্লাহ্ মন বুঝে ধন দেয়। আমি মুচলেকা দেয়া দলের নই।

সব দেশেই তারকারা মনোনয়ন পায়

তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই তারকারা মনোনয়ন পেয়ে থাকেন। এটা নতুন কিছু নয়। কারো আকাঙ্ক্ষা থাকলে নিশ্চয়ই আসবে। তারা আমাদের দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন, খেলাটাকে ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। পৃথিবীর সব দেশেই এটা দেখা যায়। তার মানে এই নয় যে তৃণমূলের নেতারা মনোনয়ন পান না। আমরা সবাই তৃণমূল থেকে এসেছি। স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছি। আমরা সেলিব্রেটি হয়ে আসিনি। কাজেই আমরা তো আছিই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও আইসিসির সাবেক সভাপতি এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগের দিনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের দল নেতা সাকিব আল হাসান।

মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন মাশরাফি-সাকিব। একনেকের সভা শেষে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘নড়াইল থেকে নির্বাচন করতে পারেন মাশরাফি, করলে আপনারা ভোট দেবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন।’ আর সাকিব প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তার (সাকিব) বয়স হয়েছে। সে নির্বাচন করতেই পারে। অবশ্য মাশরাফি ও সাকিব দুজনই এখনও জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। মাশরাফি এখনও ওয়ানডে খেলে যাচ্ছেন আর সাকিব তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।

মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়নে ভারত পাশে থাকবে

মহাকাশে প্রযুক্তি উন্নয়নে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বভারতীতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ নামের যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, তা দু দেশের জন্য একটি মাইলফলক। এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিম বঙ্গে দুদিনের সরকারি সফর শেষে ২৭ মে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পশ্চিম বাংলা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত অতিথি হিসেবে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন এবং পশ্চিম বঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তি নিকেতনে সদ্য নির্মিত বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন এবং সেখানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। দেশে ফেরার আগে কলকাতায় পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সফরকালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচএস/এএসএস/এইউএ/ওআর/এমএআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।