৬৮ বছর পর আলোর মুখ দেখলো ছিটমহলবাসী
লালমনিরহাটের অভ্যন্তরে ভারতীয় ৫৯টি ছিটমহলে রাত ১২টায় মশাল ও মোমবাতি জ্বলিয়ে ৬৮ বছর পর প্রজ্বলিত শিখায় আলোর মুখ দেখল ছিটমহলবাসী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের অধিবাসীরা দীর্ঘ বন্দী দশা থেকে মুক্তির আলোয়
আজ আলোকিত হল। ছিটের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় সূচক ভি চিহ্ন দেখিয়ে সমস্বরে গেয়ে উঠল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’
শুক্রবার রাত ১২টার পর ৫৯টি ছিটমহলে জ্বলে উঠলো মুক্তির প্রদীপ্ত শিখা। লালমনিহাটের ৫৯টি ছিটমহলে সরেজমিনে দেখা গেছে নতুন দিনকে বরণ করার জন্য শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন আয়োজন। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার অভ্যন্তরে ১১৯ নং বাঁশকাঁটা ছিটমহলে দেখা যায় বিজয় দিবসের আনন্দে ঢোল-খোল আর করতালের বাজনার তালে তালে চলছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, হাডুডু, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পড়ন্ত বিকেলে মাইক বাজিয়ে শিশু কিশোরদের উল্লাস। এই আনন্দ মেলার আয়োজক দর্শক এবং খেলোয়াড় ছিটবাসী নিজেরাই।
দর্শকদের হাততালি আর হৈ-হুল্লরের মধ্যে লাঠির ঠোকা ঠুকিতে অনিন্দ সুন্দর এক সুরের মূর্ছণা সৃষ্টি হয় । পিতা বায়েজ আলীর (৫৫) সঙ্গে ছেলে নুরুজ্জামান (২৫) নেমেছেন লাঠি হাতে। পিতা-পুত্রের এ লাঠির লড়াই দেখে ছিটবাসী নারী-পুরুষ ফেঁটে পড়ছিলো আনন্দ উল্লাসে। বাশকাঁটা ছিটমহলের অধিবাসী ছামসুন্নাহার গর্ব করে বললেন, ‘আমার বিএ পাশ স্বার্থক হয়েছে। এখন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চাকরি ও অন্য সুবিধা আমি পাব।’
পাটগ্রামের অভ্যন্তরে ১১৯ বাশকাঁটা ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সম্পাদক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, রাত ১২ টায় মশাল ও মোমবাতি প্রজ্বলিত করে নতুন দিনকে স্বাগত জানিয়ে ছিটবাসী গেয়ে উঠল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আমরা আর নই ছিটবাসী, আমরা এখন বাংলাদেশি।
শনিবার সকাল ৭ টায় প্রতি বাড়ি বাড়ি লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করা হবে। শনিবার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পহেলা আগষ্ট ‘মুক্তি দিবস’ কে উদ্যাপন করা হবে। এ দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ৫১ টি ছিটমহলে মধ্যে নলগ্রাম, ফল্লাপুর, ধরলসুতি মিগীরপুর, মশাল ডাঙ্গা ছিটমহলে রাত ৮ টা থেকে শুরু করে রাত ১২ টা পর্যন্ত মশাল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখেন বলে নলগ্রাম ছিটের অধিবাসী খতিবর রহমান ও মানিক জানিয়েছেন।
রবিউল হাসান/এআরএস