খোঁড়াখুঁড়িতে অচল মিরপুর : দিশেহারা বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরা
দুপুর একটা। আপা এখানে আসেন, আপা দেখে যান। রাস্তার ওপাশে আরেকজন বলছে, আপা আমাদেরটাতে আসেন। কারও ডাকে সাড়া না দিয়ে সোজা হেটে গেলেন তরুণী। এ দৃশ্য মিরপুর বেনারসি পল্লীর। এখানকার সুসজ্জিত দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই হাঁকডাক করছেন বিক্রয় কর্মীরা।
চলছে পবিত্র রমজান মাস। ঈদকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনেক। নিজেদের প্রস্তুতিরও শেষ নেই। কিন্তু দেখা নেই ক্রেতার। এ জন্যই তাদের এ হাঁকডাক। তবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা না পেয়ে হতাশ বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, কিন্তু বেচাকেনা একেবারেই নেই। আমরা সবাই চিন্তায় আছি। কী যে হয়! টেনশনের শেষ নেই।
মঙ্গলবার (২২ মে) মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে সরজমিনে দেখা যায়, ঈদের বাজার তো জমেইনি; বরং স্বাভাবিকের তুলনায়ও কম বিক্রি হচ্ছে। ফলে অনেকটা দিশেহারা বিক্রেতারা। বিভিন্ন দোকানের সামনে ক্রেতার আশায় হাঁকডাক ছাড়ছেন বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু দেড় শতাধিক শাড়ির দোকানের প্রায় সবই খালি। মার্কেটে হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে ক্রেতা আছে, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম বলে জানালেন দোকান মালিকরা।
কথা হয় আল হামদ বেনারসি দোকানের ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ক্রেতা না আসার জন্য চলমান ড্রেনেজ সংস্কার কাজ দায়ী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেলের কাজ। এ অঞ্চলে এখন আসা-যাওয়া কঠিন। সব সময় যানজট লেগে থাকে। আগের তুলনায় যাওয়া-আসার সময় তিনগুণ ব্যয় করতে হয়। এ জন্য অনেকে আসতে চান না।’
ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও দিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর যেতে কয়েকবার যানজটে পড়তে হয়। পার হয়ে যায় লম্বা সময়। এরপর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের দিকে যেতেই পড়তে হয় আরও বিড়ম্বনায়। এলাকার সড়কের বেহাল দশা দেখে বোঝার উপায় নেই এটাই সেই আদি বেনারসি পল্লী।
মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বরের মাঝে সব পথই এখন বন্ধ। অরজিনাল ১০-এর পর এখানে আর কোনো ক্রসিং নেই। ফলে অনেক সময় ক্রেতাকে সেই ১২ নম্বর সেকশন ঘুরে আসতে হয়।
মিরপুর ১১ নম্বরে অবস্থিত হানিফ সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে যেমন দূরের ক্রেতারা এখানে ছুটে আসতেন, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দূরের ক্রেতারা খুব একটা আসছেন না। বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি। এটা আরেক যন্ত্রনা। এ জন্য বেচা-বিক্রি কমে গেছে। আর ঈদের বিক্রি তো নাই-ই।’
বেনারসি পল্লীর অন্য বিক্রেতারা জানান, গত দুই তিন বছর ধরে ঈদে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তারা। গতবারের তুলনায়ও এবার বিক্রি অনেক কম। এ জন্য ভারতে গিয়ে বাংলাদশিদের কেনাকাটা করাকেও কারণ হিসেবে দাঁড় করান তারা।
তবে বিক্রি নিয়ে এখনও আশাবাদী বিক্রেতেরা। আপন বেনারসি হাউজের বিক্রয়কর্মী আবদুল হান্নান মনে করেন, ১৫ রোজায় জমে ওঠবে বেচা-বিক্রি। এখন মানুষের কাছে টাকা নেই। ২৮ থেকে ৫ তারিখের (২৮ মে থেকে ৫ জুন) মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বেতন হবে। তখন জমে ওঠবে বিক্রি।
প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা
ঈদকে সামনে রেখে বিশাল প্রস্তুতি নিয়েছে দোকানরা। দোকানে এসেছে নতুন রঙ ও বাহারি ডিজাইনের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। ঈদ উপলক্ষে পাওয়া যাচ্ছে বিয়ের স্বর্ণকাতান, বেনারসি জর্জেট, গাদওয়াল, কাঞ্জিভরম, অপেরা কাতান, পাছারা কাতান, তসর কাতান, ধুপিয়ান, বালুচুরি তাঁত, মসলিন কাতান, ঢাকাই জামদানি, স্বর্ণ কাতান, ভেলভেট কাতান, চুন্দ্রি কাতান, পিওর কাতান, ফুলকলি কাতান, মসলিন জামদানি, জুট কাতান, চেন্নাই কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি।
এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে কাতান থ্রি-পিস, শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, লুঙ্গি, গামছা, ছোটদের ড্রেসসহ রকমারি পোশাক। তবে নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাতান শাড়ি।
এসব শাড়ি হরেক দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মসলিন বেনারসি ৮-১৭ হাজার টাকা, কাতান বেনারসি ১৫-৩০ হাজার টাকা, ব্রোকেট বেনারসি ৪-৫ হাজার টাকা, কার্পেট বেনারসি ৫-৫ হাজার ৫০০ টাকা, মসলিন ২-৩ হাজার টাকা, নেট জুট সাড়ে ৪-৮ হাজার টাকা, বিয়ের গর্জিয়াস শাড়ি ১৫-২৫ হাজার টাকা, সফট সিল্ক ৪-৪ হাজার ২০০ টাকা, ঢাকাই জামদানি ৪-৩০ হাজার টাকা, রেডি কোচা ৬-৬ হাজার ৫০০ টাকা, জুট হাফ সিল্ক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমএ/এসআর/আরএস/এমএস