শেখের বেটি এবার কামের কাম করিছে
দুইটি বাঁশের লাঠিতে ভর করে ঘর থেকে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে বাড়ির উঠানে দাঁড়ালেন বৃদ্ধা ময়মন নেছা।বেশ হাসি মাখা মুখ। কি যেন বুঝে বলে উঠলেন, শেখের বেটি হাসিনা এইবার কামের কাম করিছে। মুই শেখের বেটিক প্রাণভরি দোয়া দেছো। এবার আমার মৃত্যু হলেও শান্তি।
শুক্রবার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ২৮ নম্বর বড়খানকিতে গিয়ে দেখা মেলে বৃদ্ধা ময়মন নেছার।এর পর তিনি জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।
বৃদ্ধা ময়মন নেছা জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর আগে আর আমরা স্বাধীন হতে যাচ্ছি ৬৮ বছর পর। একই ছিটমহলের বাসিন্দা আশি বছরের বৃদ্ধা জয়গুন নাহার জাগো নিউজকে বললেন, আমরা ভারতের ছিটমহলের বাসিন্দা। তাই আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। ছিল না ভোটের অধিকারও। এবার আমরা হতে যাচ্ছি বাংলাদেশের নাগরিক।আমরা সেই প্রহর গুণছি।
ময়মন, জয়গুন নাহারের মতো সেই মাহেন্দ্রক্ষণরে জন্য অপেক্ষা করছেন উপজেলার অভ্যন্তরে থাকা চারটি ছিটমহলের একশ ১৯ পরিবারের পাঁচশ ৪৫ সদস্য।তারা নিজেদের ঘরে ঘরে রেখেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসহ ৬৮টি করে মোমবাতি। অপরদিকে, ছিটমহলের চারটি হিন্দু পরিবার তাদের বাড়িতে এনেছে ৬৮টি করে প্রদীপ। শুধু তাই নয় আজকের রাতকে স্মরণীয় করে রাখতে নিজ উদ্যোগে ছিটমহলবাসীরা বনভোজন আর আনন্দ উল্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ছিটমহলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনোরকম অবনতি যাতে না হয়, সেজন্য প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। শুক্রবার সারারাত ছিটমহলের বাহিরে থাকবে পুলিশ। কারণ আইনগতভাবে রাত ১২টার আগ পর্যন্ত আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিটমহলে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ১ আগস্ট আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ৪টি ছিটমহলে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে। শুক্রবার রাতে যেন বহিরাগত কেউ কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশের একশ ৬২টি ছিটমহল অটোমেটিকভাবে বিনিময় হয়ে যাবে। ছিটমহল উন্মুক্ত করা উপলক্ষে সরকারিভাবে ছিটমহলে শনিবার ভোরে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৪টি ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ছিটমহলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ সর্তকতায় রয়েছে।
ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রহুল আমিন খান বলেন, চারটি ছিটমহলে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এমজেড/এএইচ/এমএস