বঙ্গবন্ধু-১ এর সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশনের সংযোগ পরীক্ষা চলতি সপ্তাহে
দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সঙ্গে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার দুই গ্রাউন্ড স্টেশনের সংযোগ স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আজ শুক্রবার (১৮ মে) বাংলাদেশে আসছেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশি ১৮ তরুণ বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছেন তারা।
শুরুতে আগামী কয়েকদিন দুই গ্রাউন্ড স্টেশনে চলবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ‘আইওটি’ (অবকাঠামোর সঙ্গে ডিভাইসের সংযোগ) কাজ।
বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন সংস্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, মহাকাশে পাড়ি দেয়ার পর পর বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট তার গন্তব্যে পৌঁছাতে আরও অন্তত দুই দিন সময় নেবে।
স্যাটেলাইটটি তার কক্ষপথে পৌঁছানোর পর শুরু হবে বাংলাদেশের গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুই গ্রাউন্ড স্টেশনে সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ। এ কাজ সরাসরি তদারকি করবেন স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের বিজ্ঞানীরা। গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় দুই দলে ভাগ হয়ে তারা কাজ করবেন। তাদের পাশে থেকে সহায়তা করবেন বাংলাদেশের ১৮ তরুণ।
বিষয়টি ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের ওয়েবসাইট সূত্রেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা বলছেন, ‘উপগ্রহটি ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য সাত থেকে দশ দিন সময় লাগবে। এরপর কয়েক দিন ধরে পরীক্ষার (আইওটি) মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর উপগ্রহটিকে পর্যায়ক্রমে বেতবুনিয়া ও গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।’
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনে কাজ শুরু করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করবে ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া। এরপর থেকে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ হবে গাজীপুর স্টেশনেই। তবে কখনও যদি গাজীপুর স্টেশন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তখন বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন-২ কাজ শুরু করবে। অনেক ক্ষেত্রে দুই গ্রাউন্ড স্টেশনেই সমানতালে কাজ হবে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার দুই গ্রাউন্ড স্টেশন। এ লক্ষ্যে শিগগিরই গ্রাউন্ড স্টেশন দুটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এ নিয়ে গ্রাউন্ড স্টেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন।
তারা বলছেন, বিটিআরসির অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে স্টেশন দুটি শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এর আগে বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশনে কর্মরত প্রকৌশলীরা জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, স্টেশনটি ব্যাকআপ স্টেশনে হিসেবে তৈরি করা হলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাড়ি দেয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নেবে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে।
ইন্দোনেশিয়ার আকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট :
স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান স্টাফ ল্যায়ার জানিয়েছে, ঠিক পথ ধরেই এগুচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু-১’। বর্তমানে আজ শুক্রবার (১৮ মে) বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি ইন্দোনেশিয়ার আকাশে রয়েছে। যার বর্তমান (বাংলাদেশ সময় ১০টায়) দেশটির অবস্থান পূর্ব কালিমান্তান প্রদেশর ওপর। এর আগে গতকাল বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৭ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমবা দ্বীপের ওপর দিয়ে নিজ কক্ষপথের দিকে এগুচ্ছিল স্যাটেলাইটটি। এটি আগামী দুই দিনে ভারত মহাসাগরের ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউগিনির ওপর দিয়ে ফিলিপাইন হয়ে তার কক্ষপথে প্রবেশ করবে।
এমবিআর/এমএস