অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করছি : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:১৯ পিএম, ১৭ মে ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বর্তমানে অসংখ্য অনলাইন গণমাধ্যম চালু রয়েছে। ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির সুবাদে অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই অনলাইন গণমাধ্যমকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আমরা ‘অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা’প্রণয়ন করছি। অচিরেই এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। সাইবার ক্রাইম নীতিমালা করছি ক্রাইম রোধ করার জন্য। আমি সাংবাদিকদের বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার তাদের অসুবিধা হয় এমন কিছু করবে না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকার সাধ্যমতো কাজ করছে। আমরা বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন- ২০১৪ প্রণয়ন করেছি। সংবাদপত্রকর্মী (চাকরী শর্তাবলী) আইন- ২০১৫ এর খসড়া প্রণয়ন করেছি। সাংবাদিকদের জন্য প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলন-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের মহাসচিব ওমর ফারুক। অন্যদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ময়মনসিংহের সভাপতি আতাউল করিম, কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, বগুড়ার সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, রাজশাহীর সভাপতি কাজী শাহেদ, নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আব্দুস সালাম, যশোরের সভাপতি সাজেদ হোসেন, কক্সবাজারের সভাপতি আবু তাহের, খুলনার সভাপতি জাহিদ হোসেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নিহত সাংবাদিকদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএফইউজের বিভিন্ন ইউনিটের ১০ জন সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। এছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি তরুণ তপন চক্রবর্তী ও সম্পাদক আল মামুন সাংবাদিকদের বরাদ্দ দেয়ার জন্য জমির কিছু কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকার সাধ্যমতো কাজ করছে। আমরা ১২ হাজারের বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বিভিন্ন ভাষা শেখা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। এজন্য কয়েকটি অ্যাপস চালু করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গত সাত বছরে সাত হাজারেরও বেশি সংবাদপত্র নিবন্ধন পেয়েছে বলে জানান তিনি। নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাও সাংবাদিকতা করেছেন, যা তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। সে অর্থে আমিও আপনাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। দাবি-দাওয়া ছাড়াই আমি সাংবাদিকদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশে ফিরে আসার পর আজ ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু প্রেসের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু আমি সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কারণ আমি জানি আমি কী করছি। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে সবই সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে- এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে, কিন্তু দুর্নীতি কি প্রমাণ করতে পেরেছে? বিশ্ব ব্যাংক প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে এসব বানোয়াট ছিল। নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করেছি। এই একটি ঘটনাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। বাঙালি বীরের জাতি, এ জাতি কারও কাছে হাত পেতে চলে না। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের সময় ছয় হাজারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। কারণ, আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করি নাই। করবও না আমরা। জনগণের এটা অধিকার। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। সেটা ফিরে এসেছে। এটা যেন কেউ আর বানচাল করতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই দেশে কারফিউ দিয়েছে, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু কি না তা নিয়ে কথা বলে। বিএনপি জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলো কি না সে বিষয়ে বক্তব্য দেয়। কিন্তু আমরা যদি প্রশ্ন করি, এই দেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তার হ্যাঁ/না ভোট, তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, অথবা সেই ৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন- প্রত্যেকটা নির্বাচনে ভোট চুরির প্রক্রিয়াটা আছে। এই দেশে দুর্নীতি এবং ঋণখেলাপি কালচার, এটাতো তারাই তৈরি করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা- এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে, অস্ত্র ঠেকিয়ে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে, তারা আবার গণতন্ত্র কীভাবে দেয়, সেটা আমি জানি না। এমনকি প্রতিদিন তো কারফিউ ছিল। তার মানে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, জনগণতন্ত্র তারা দেয় নাই। এটাই হলো বাস্তবতা এবং গণতন্ত্রের ভাষাও তারা বোঝে না। যারা সবসময় জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা শুনতে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আজকে আকাশ জয় করেছি। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কত কথা এবং আরও অনেক কথাই তারা বলে। নিজেদের যদি মাথায় ঘিলু কিছু কম থাকে তাহলে তো বলবেই। আমি নেভির জন্য সাবমেরিন কিনেছি। এই সাবমেরিন উদ্বোধন করে আসতে পারলাম না, বক্তৃতা শুনলাম যে, সাবমেরিন নাকি ফুটা, পুরানোটা কিনেছি। ওটা নাকি পানির নিচে চলে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে। সেজন্যই তো আনা, সেই অভিযোগ আসলো। তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর আমি দেখেছি, বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতনের কথাটা অনেকেই লিখতে চায়নি। আবার অনেকেই সাহসের সঙ্গে সংবাদ দিয়েছে। যারা দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাই, আর যারা দেয় নাই তাদের করুণা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নাই। আপনারা জানেন যে, দুটি পত্রিকা আমি কিন্তু পড়িও না, রাখিও না। গণভবনে ঢোকা নিষেধ। দরকার নেই আমার। ওই সার্কাসের গাধার মতো যারা বসেই থাকে দড়ি ছিঁড়বে কবে, আর পতাকা পাবে কবে?

এফএইচএস/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।