মেয়র আসার পর বাজারে কমে গেল পণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ১৭ মে ২০১৮

ভাই, বেগুন কত? বিক্রেতার সোজা সাপটা উত্তর ৭৫ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া? ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতার এমন কথোপকথনের দৃশ্যটি রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে। তখন সকাল ১০টা।

এদিকে রমজান উপলক্ষে দুপুর ১২টার দিকে হাতিরপুল কাঁচাবাজার পরিদর্শনে এসে কাঁচা পণ্য, মাছ মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য যাচাই অভিযানে আসার কথা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের। অন্যদিন কাঁচা বাজারের সামনে মূল্যে চার্টের আপডেট না থাকলেও বৃহস্পতিবার তা ছিল একদম স্বচ্ছভাবে। কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, আজ মেয়র আসবেন বলেই মূল্য চার্ট টাঙানো হয়েছে।

হাতিরঝিল কাঁচাবাজারে নিয়মিত বাজার করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সোহরাব হোসেন। আজও বাজারে এসেছেন তিনি। কিন্তু আজ কাঁচা বাজারে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। মিষ্টি কুমড়া কিনেছেন ২ কেজি। বাজারে টাঙানো মূল্যের তালিকা অনুযায়ী ২ কেজি মিষ্টি কুমড়ার দাম সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা হওয়া উচিত। অথচ বিক্রেতা দাম চাচ্ছেন ৮০ টাকা' বলে অভিযোগ জানালেন ক্রেতা সোহরাব হোসেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি ৪০ টাকা কেজি দরে মিষ্টি কুমড়া আর ৭৫ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনে ফিরলেন।

অথচ বাজারের বাহিরে টাঙানো মূল্যে তালিকায় স্পষ্ট করে লেখা আছে মিষ্টি কুমড়া পাইকারি ক্রয় মূল্যে ১৫ থেকে ১৮ টাকা। আর যৌক্তিক বিক্রি মূল্যে ১৮ থেকে ২২ টাকা। অথচ ওই ক্রেতাকে মিষ্টি কুমড়া কিনতে হলো হল ৪০ টাকা কেজি দরে।

এমন অভিযোগের জবাবে বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন জানান, তার এই মিষ্টি কুমড়া ভালো মানের, কেনাও পড়েছে বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু মূল্যে তালিকায় সঙ্গে তো আপনার দামের মিল নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে বিক্রেতা বলেন, মূল্য তো আমরা নির্ধারণ করতে পারি না সেটা বড় বাজার থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা যেমন দামে কিনি সামান্য লাভ করে তেমন দামেই বিক্রি করি।

এটা ছিল সকালের দৃশ্য। এরপর যখন বেলা ১২টার পর মেয়র হাতিরপুল বাজার পরিদর্শনের আসলেন তখনই কমে গেল সব পণ্যের দাম। বাজারের বাহিরে টাঙানো মূল্যে তালিকার সঙ্গে মিল রেখে এবার দাম চাইতে শুরু করলেন বিক্রেতারা।

এ সময় একজন ক্রেতা বেগুনের দাম জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা উত্তর দেন ৬০ টাকা কেজি, আর মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা। হঠাৎই এমন দামের তারতম্য বিষয়ে দোকানি আলাউদ্দিন বলেন, বাজার মনিটরিং এ এসেছে তাই পাইকারি দাম চাইছি। আমার বেশি দামে কেনা, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। বাজার ঠিক করতে হলে বড় বাজারে যান।

বাজার করতে আসা রুমা আক্তার নামের একজন গৃহিণী অভিযোগ করে বলেন, রমজান আসলেই সব কিছুর দাম বেড়ে যায়, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে না। হাতিরপুল বাজারে টাঙানো মূল্য তালিকার সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল নেই, সব পণ্যের দামই বেশি। তবে মেয়র যখন পরিদর্শনে আসেন তখন বিক্রেতারা কম করে দাম চাচ্ছেন অথচ বাস্তবে তা ভিন্ন।

তিনি বলেন, এভাবে আয়োজন করে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন আসলে বাজারে পণ্যের আসলে কেমন দামে বিক্রি হয় তার সঠিক চিত্র বুঝতে পারবে না। এজন্য প্রায় দিনই গোপনে এসে বাজার মনিটরিং করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে এসব বিক্রেতারা কতটা বেশি দামে পণ্যে বিক্রি করে। আর এসবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাজারের বাহিরে টাঙানো মূল্য তালিকার সঙ্গে ক্রেতারা মিল পাচ্ছে না এমন অভিযোগ মেয়রকে জানানো হলে মেয়র সাঈদ খোকন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামীকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫টি অঞ্চলে ৫টি টিম মাঠে নামবে। রমজান মাসে পণ্যের দাম ক্রেতা সাধারণের নাগালে রাখতে, পাশাপাশি বিক্রেতারা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য যেন বিক্রি করতে না পারে সে লক্ষ্যে ডিএসসিসির ৫টি অঞ্চলে ৫টি টিম অভিযান পরিচালনা করবে। যেন বিক্রেতারা কোন ক্রমেই বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের টিম কাজ করবে।

তিনি বলেন, তবে গত রমজানের তুলনায় আজ পর্যন্ত অধিকাংশ পণ্যের দাম কম রয়েছে। গত ২/৩ সপ্তাহ আগের চেয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাজারের কারণে ৫/১০ টাকা বেড়েছে। এই বর্ধিত মূল্যের চেয়েও রমজানে যদি কেউ বেশি নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএস/এমআরএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।