কনক্রিটের সড়ক : কামাল-মোশাররফ বাহাস


প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৫

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের যুক্তির বিপক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী কিছু দিন ধরে কনক্রিটের সড়কের পক্ষে জোড়ালো ভাবে মত দিয়ে আসছিলেন। তার মতে, এতে সরকারের সাশ্রয় হবে। কিন্তু  দেশের সব জায়গায় কনক্রিটের সড়ক তৈরি সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যেসব রাস্তাঘাট করা হয় এগুলো কনক্রিট দিয়ে তৈরি করা কোন ভাবেই যৌক্তিক নয়। বলা হচ্ছে, এতে খরচ কম হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। কিন্তু যেখানে কনক্রিটের রাস্তা করা হবে সেই মাটি এর উপযোগী নয়। মাটিকে উপযোগী করতে হলে যে পরিমাণ খরচ হবে তার চেয়ে পিচের রাস্তার খরচ অনেক কম।’

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে এলজিআরডি মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিব আবদুল মালেক এর সঞ্চালনে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন সংস্থাগুলোর প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন।  

সভায় উপস্থিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একদল লোক কনক্রিটের তৈরি রাস্তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। প্রকৌশলী হিসেবে আপনাদের সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। আসলে সিমেন্ট দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য বাংলাদেশের মাটি উপযোগী না, এটা বলতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি একজন সচেতন প্রকৌশলী হিসেবে যখন বুঝতে পারছি এটা সম্ভব নয়, সেখানে আপনারা এটা বুঝতে পারছেন না কেন?’

এ সময় যেসব বিশেষজ্ঞ এসব নিয়ে কথা বলছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলারও নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

পুরো সভাটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। শুরুতেই মন্ত্রী এলজিইডি দপ্তরের সঙ্গে সভা করেন। পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের মহা-পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকের শুরুতে এলজিইডি-র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী তার অধিদপ্তরের আওতাধীন ১১০টি প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, এর মধ্যে চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ১০১টি। সভায় প্রকল্পের পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন। সবশুনে এলজিআরডি মন্ত্রী প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় কিনা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে ভাবতে বলেন।

এলজিইডির কার্যক্রম ও প্রকল্পের নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়নের বিষয়টি তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। মনিটরিং মানেই শুধু দোষ ধরা নয়, কাজে সহায়তা করা। এতে কাজে আরো গতি বাড়বে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ওয়াসা সমূহের সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যপারে ভূ-গর্ভস্থ্য পানির উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে পুকুর জলাশয়ের পানি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ভূ-গর্ভে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে এখনি আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।

সভায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। মন্ত্রী, প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি বাস্তবায়ন তরাহ্নিত করার লক্ষ্যে তদারকি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন।

পরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাদের প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। এছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের অগ্রগতিও সভায় আলোচনা হয়। এলজিআরডি মন্ত্রী যত দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্পের মহা-পরিচালককে নিজস্ব তথ্য-ভান্ডার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।

এসএ/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।