‘মা, অামি কি অার বাঁচব না’

সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশিত: ০২:১১ পিএম, ১৪ মে ২০১৮

সাত বছরের শিশু ইমাম হোসেন। মায়াবী চাহনি অার ফুটফুটে চেহারা দেখে কেউ বুঝতেও পারবে না তার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সার। যে বয়সে মায়ের কোলে বসে গল্প শোনার কথা সে বয়সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মায়ের কাছে জীবন মৃত্যুর পার্থক্য জানতে চায় শিশুটি। মায়ের মমতাময় হাতের স্পর্শে বারবার খুঁজছে বেঁচে থাকার মানে।

বছর দুয়েক হল স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিল ইমাম হোসেন। পড়াশোনা করে অসহায় মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে সে। ছোট্ট জীবনে তার স্বপ্ন এটুকুই। কিন্তু অাশার মধ্যে নিরাশা হয়ে স্বপ্নটি থমকে অাছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২১০ নাম্বার ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর বেডে। সেখানে প্রহর গুণছে অাবার স্কুলে যাবার। ছলছল নয়নে এদিক ওদিক তাকিয়ে বার বার প্রত্যাশা করছে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো ধুলোমাখা মাঠে ফিরে যাবার।

দারিদ্র্যের অাঘাতে জর্জরিত সংসারে একমাত্র সন্তান ইমাম হোসেনকে নিয়েই দিন কাটছিল সেলিম-মনোয়ারা দম্পতির। তাদের কাছে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের অপর নাম ছিল শিশু ইমাম। অভাবের সংসারে যেখানে নুন অানতেই পান্তা ফুরাই সেখানে অার কোনো সন্তান নিয়ে অভাবকে দীর্ঘায়িত করতে চাননি এই দম্পতি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের বেড়াজালে সর্বস্ব হারিয়ে এখন ঠাঁই নিয়েছে মানুষের মানবতায়। অর্থের অভাবে বুকের ধন শিশুটিকেও হারাতে বসেছে এই দম্পতি।

শিশুটির বাবা মো. সেলিম রাজধানীর অাবদুল্লাহপুরে একটি হোটেলে কাজ করছেন। মা মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার চন্ডবিলা গ্রামে। ২০০৮ সালে বিয়ের পর জীবিকার তাড়নায় দুজনে চলে অাসেন অাবদুল্লাহপুরে। ২০১০ সালে তাদের সংসারে অাসে শিশু ইমাম। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ২০১৬ তাকে ভর্তি করা হয় অাবদুল্লাহপুরে মকবুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে প্লে থেকে ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়াশোনা চলে তার। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারিতে শিশুটির শরীরে দেখা দেয় মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের লক্ষণ।

শিশুটির মা মনোয়ারা জাগো নিউজকে বলেন, অামার ছেলে অামার কাছে বারবার জানতে চায়- মা অামি কি অার বাঁচবো না? অামি কি অার স্কুলে যাব না? একথা শুনলে অামার মন চায় দেয়ালের সঙ্গে মাথাটা ঠুকে মরে যাই। তার এ প্রশ্নের উত্তর তো অামার কাছে নেই। কিন্তু শিশুটির মুখের দিতে তাকিয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া অার কিছুই করতে পারি না।

তিনি অারও বলেন, এ পর্যন্ত গত ১ বছরে ছেলের চিকিৎসায় প্রায় ১১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ টাকার মধ্যে অামাদের সব সম্পত্তি মিলিয়ে ১ লাখ টাকার মতো ছিল। বাকি টাকাগুলো মানুষের সহযোগিতায় পেয়েছি। অামাদের মতো গরিবদের পাশে যদি এই ভালো মানুষগুলো না দাঁড়াতো তাহলে এত দিনে হয়তো অামার বেঁচে থাকার ভরসা ইমাম মারা যেত।

jago

তিনি জানান, শিশুটির চিকিৎসায় বেশি খরচ হয় কেমো ইনজেকশন এবং এ পজিটিভের সাদা রক্ত (ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা/ফ্রেশ প্লাজমা) দিতে গিয়ে। রক্ত থেকে সাদা রক্ত বের করতে হয় পিজি হাসপাতালে। সেখানে প্রতি ব্যাগ সাদা রক্তে খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কেমো ইনজেকশনে প্রতিটিতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা করে।

তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, ডাক্তাররা বলছে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা হতে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর লাগবে। এতো দিনে অারও প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাব সে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে যাই। কার কাছে চাইব। যাদের কাছে চাইছি তারা তো দিয়েছে। তাদের কাছে তো বার বার চাইতে পারি না। তাহলে কি অামার ছেলেকে বাঁচাতে পারবো না? ভাই অামার ছেলেকে বাঁচাতে অাপনাদের সহযোগিতা চাই।

এ ব্যাপারে ঢামেকের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক বলেন, তার শরীরে রক্ত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া এবং শরীরের হাত পা ফুলে যাওয়া প্রধান লক্ষণ। এ ধরনের রোগের দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। সেজন্য অনেক সময় অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। অাশা করছি সবার সজযোগিতায় শিশুটি সুস্থ হয়ে অাবার স্কুলে যেতে পারবে।

শিশুটির চিকিৎসায় যদি কেউ সাহায্য পাঠাতে চান তাহলে নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন তার বাবা-মা।

ইউসিবি ব্যাংক, সাতৈর শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর- ১০-২৩-২০-১০-০০-০৩-৫০-৩৪ অথবা ০১৬২৬-৪৫০৩৫১ বিকাশ (পারসোনাল)। এছাড়া (শিশুটির দাদা) ০১৭২১-৯০৪৬৪১ নম্বরেও যোগাযোগ করে সাহায্য পাঠানো যাবে।

এসএইচ/এমবিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।