কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন : জনপ্রশাসন সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ০৮ মে ২০১৮

কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

শিক্ষার্থীরা ৭ মে’র মধ্যে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির সময় বেঁধে দিয়ে ওই পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। এরমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা। বুধবার (৯ মে) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

এমন পরিস্থিতিতে কোটার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘কোটা বাতিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত রূপ, যাকে আপনারা বলেন প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার, সে কাজটা একটু বাকি আছে। সেটা কোন পর্যায়ে আসবে সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’

‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে এটা কি বলা যায়’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন আছে।’

‘কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সোমবার (৭ মে) পর্যন্ত স্থগিত ছিল’- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধিরা গেলে তাদেরকে বলা হয় ৭ মে পর্যন্ত এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হবে। দেখা গেল সেই কথা বলার পরও আন্দোলন থামেনি। তা হলে আমার বিবেচনায় ৭ তারিখ তো আর থাকল না।’

‘তারা যদি সেদিন আন্দোলন বন্ধ করত তাহলে আজকে বলা যেত ৭ তারিখে কেন হলো না। এটা ঠিক কি-না?’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টা সরকারের মাথার মধ্যে আছে। সরকারের বিবেচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী যখনই নির্দেশ দেবেন সেটা বাস্তবায়িত হবে।’

কোটার বিষয়টি দেখার জন্য কমিটি গঠনের কোনো নির্দেশনা এসেছে কি না- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা এখনও...চূড়ান্তভাবে না। আমরা যে কোনোভাবে প্রস্তুত- কমিটি লাগলে করব, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলে করব। সরকার প্রধান যেভাবে বলবেন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পুরো প্রক্রিয়াটি কী হবে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন একটা বললাম, সেটা থেকে কালকে একটু ব্যত্যয় হল, পরে আপনি বলবেন, গতকাল এটা বলেছিল আজকে আবার এটা হচ্ছে। এত অ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই।’

কোটা বাতিল হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিলের কথা বলেছেন তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি তিনি সংসদে বলেছেন, যারা নৃ-গোষ্ঠী ও যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবস্থার রূপরেখা আমরা এখনও সেভাবে প্রকাশ করিনি। সেটি আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেটা চিন্তা করছেন।’

কোটা নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হবে এটা কি বলা যায়- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা তো আশাবাদী, দ্রুত হওয়াই ভালো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই এটা নিয়ে কাজ করি। প্রতিদিনই কাজ করি।’

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।

এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা।

৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এরপরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’

কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের স্বোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন।

‘অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে’- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

আরএমএম/এসআর/এমএমজেড/পিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।