পাসে মেয়েরা, জিপিএ-৫-এ ছেলেরা
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে এবারও মেয়েরা এগিয়ে। তবে মেধার সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ছেলেরা।
এবার এসএসসি ও সমমানে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ শিক্ষার্থী। ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন। পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন।
রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন।
এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ১০ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন। পাস করেছে সাত লাখ ৮৪ হাজার ২৪৫ জন। ছাত্রী ছিল ১০ লাখ চার হাজার ২৫৪ জন। পাস করেছে সাত লাখ ৯১ হাজার ৮৫৯ জন।
ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছাত্রীদের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৫৫ হাজার ৭০১ জন। ছাত্রী ৫৪ হাজার ৯২৮ জন। এখানে ছাত্ররা ছাত্রীদের চেয়ে এগিয়ে।
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এ সময় সার্বিক ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ফলের খাতায় এবার কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমভাবে মূল্যায়ন করা হয়, এজন্য আমরা খাতা পুনঃমূল্যায়নের ব্যবস্থা রেখেছি।’
‘ফলাফল পরীক্ষার মোট ফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে’ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ মানসম্মত করার চেষ্টা চলছে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
‘এবার আটটি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ছেলেদের পাশের হার ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮০ দশমিক ৩০ শতাংশ। উভয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৫ জন।’
‘অন্যদিকে, মাদরাসা বোর্ডে ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে, ছেলেরা এক হাজার ৯৮৮ ও মেয়েরা এক হাজার ৩৮৩ জন। মোট তিন হাজার ৩৭১ জন। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে, মেয়েরা এক হাজার ৯১৪ ও ছেলেরা দুই হাজার ৪৯৯ জন। মোট জিপিএ-৫ এর সংখ্যা চার হাজার ৪১৩।’
এবার ১০ বোর্ডের মধ্যে আট সাধারণ বোর্ডে মাধ্যমিকে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। যেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ছাত্রদের ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা বোর্ড, পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ছাত্র ৭৯ দশমিক ৭৯ ও ছাত্রী ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ; তৃতীয়স্থানে কুমিল্লা বোর্ড, পাসের হার ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ, ছাত্র ৮১ দশমিক ২৯ ও ছাত্রী ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ; চতুর্থস্থানে দিনাজপুর, পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬২, ছাত্র ৭৫ দশমিক ৮১ ও ছাত্রী ৭৯ দশমিক ৫১; পঞ্চম অবস্থানে বরিশাল বোর্ড, পাসের হার ৭৭ দশমিক ১১, ছাত্র ৭৫ দশমিক ২৩ ও ছাত্রী ৭৯ দশমিক ০২; ষষ্ঠস্থানে যশোর বোর্ড, ৭৬ দশমিক ৬৪, ছাত্র ৭৪ দশমিক ৪৪ ও ছাত্রী ৭৮ দশমিক ৮৭; সপ্তমস্থানে চট্টগ্রাম বোর্ড, ৭৫ দশমিক ৫০, ছাত্র ৭৫ দশমিক ৮৬ ও ছাত্রী ৭৫ দশমিক ১৯; অষ্টমস্থানে সিলেট বোর্ড, পাশের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ, ছাত্র ৮১ দশমিক ৩৩, ছাত্রী ৭৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আগে বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার অনেক কম ছিল। আমরা এসব বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা ও অতিরিক্ত ক্লাসসহ নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফল ভালো করতে সক্ষম হয়েছি।’
অন্যদিকে, বিদেশি আট কেন্দ্রে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯০ জন।
বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ও মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানা যাচ্ছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের লিখিত বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলে ৮ মার্চ পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাহাবুবুর রহমান, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এমএইচএম/এসআর/এমএআর/পিআর/এমএস