ভুলভাবে মুসলমানদের চরমপন্থার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে মুসলমানদের ভুলভাবে চরমপন্থার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর আগে মুসলিমরা কখনও এত বেশি সংঘাত, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, বিভাজন ও অস্থিরতার মুখোমুখি হয়নি। এই অবস্থা চলতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দিনব্যাপী ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভার (সিএফএম) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ এ ওসাইমিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আইভরিকোস্ট-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ৪৪তম সিএফএম-এর সভাপতি মার্সেল আমন-তানোহ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে ৪৫তম সিএফএম-এর সভাপতিত্ব হস্তান্তর করেন।
তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ওআইসি সম্মেলনের সভাপতির প্রতিনিধি বেকির বোজড্যাগসহ এশিয়া, আরব এবং আফ্রিকার পক্ষে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ভাইস মিনিস্টার আব্দুর রহমান মোহাম্মাদ ফাসির, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দেল বিন আহমেদ আল জুবায়ের এবং সেনেগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদকি কাবা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ এ ওসাইমিন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে কাবা শরিফের গিলাব উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রী ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম বৈঠক (সিএফএম) উপলক্ষে অনুষ্ঠানে স্মারক ডাক টিকিটও অবমুক্ত করেন।
ইতিহাসের বিশেষ সন্ধিক্ষণে ঢাকায় ইসলামি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি যখন প্রযুক্তি প্রবাহ ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং যুব সমাজের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসমতা, অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অবিচার এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব।
তিনি বলেন, এসবের সমন্বিত প্রভাবে আমাদের ইসলামি চিন্তা-চেতনার মৌলিক ভিত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এমন অবস্থা আগে কখনও আমরা প্রত্যক্ষ করিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সময় এসেছে আমাদের চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার। সময় এসেছে টেকসই শান্তি, সংহতি ও সমৃদ্ধির আলোকে আমাদের ভবিষৎকে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানোর।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামি বিশ্বের রূপকল্প এমন হতে হবে যাতে আমরা আমাদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারি। নিজেরাই সব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাধান করতে পারি। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ফলাফল-কেন্দ্রিক নতুন কৌশল-সম্বলিত একটি রূপান্তরিত ওআইসি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ জনশক্তি, এক তৃতীয়াংশের বেশি কৌশলগত সম্পদ এবং সম্ভাবনাময় কয়েকটি উদীয়মান শক্তিশালী অর্থনীতির দেশসহ অপার সম্ভাবনা ও সম্পদশালী মুসলিম বিশ্বের পিছিয়ে পড়ে বা অমর্যাদাকর অবস্থায় থাকার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, উন্নয়ন আমাদের অধিকার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমাদের নাগালের মধ্যে এবং সামাজিক অগ্রগতির উপায় আমাদের হাতে। আমাদের এখন প্রয়োজন যৌথ ইসলামি কর্ম-কৌশল ঢেলে সাজানো। তিনি এ প্রসঙ্গে তার পাঁচ দফা চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরেন-
এক: ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের ওপর সবাইকে আস্থাশীল হতে হবে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতা বর্জন করতে হবে এবং ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা বা সমাজে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
দুই: শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব বিবাদের সমাধান করতে হবে। আমাদের নিন্দুকদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না দিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। ওআইসিতে আমাদের বিরোধ মীমাংসার প্রক্রিয়াসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে এবং আমাদের নিজস্ব শক্তি ও সম্পদসমূহের আরও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।
তিন: আমাদের আত্মসচেতন আলোকিত জীবনযাপন করতে হবে। মৌলিক বিশ্বাসকে অটুট রেখে আজকের আধুনিক সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবনযাপন করতে হবে। তাহলেই ইসলাম-সম্পর্কিত ভীতি দূর হবে। আমাদের মুল্যবোধভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লালন করে আলোকিত বিশ্ব ব্যবস্থার পথ দেখাতে হবে।
চার: দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ এবং জরুরি মানবিক দূরবস্থা মোকাবেলার জন্য ইসলামি সম্মেলন সংস্থার বলিষ্ঠ কর্মসূচিসহ দ্রুত কার্যকর উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক। ওআইসি-২০২৫ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সর্বশেষ: ইসলামের শাশ্বত মূল্যবোধ যেমন শান্তি, সংযম, ভ্রাতৃত্ব, সমতা, ন্যায়বিচার ও সমবেদনা থেকে আমাদের সর্বদা অনুপ্রেরণা ও শক্তি আহরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, তার সুদূরপ্রসারী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় যোগদান করে।
এফএইচএস/এমআরএম/জেআইএম