‘জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও র্যাবকে কাজ করতে হবে’
জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও র্যাবকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব। আমি আশা করছি, র্যাব যেভাবে জঙ্গিবাদ দমন ও মোকাবেলায় সফল হয়েছে তেমনিভাবে মাদকের বিরুদ্ধেও যেন অভিযান অব্যাহত থাকে।
র্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (২৬ মার্চ) উপলক্ষে আজ (৩ মে, বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাদক কারা তৈরি করে, কারা বিক্রি করে, কারা পরিবহন করে আর কারা সেবন করে? -তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, এরা সকলেই সমভাবে দোষী। এটা মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। র্যাব তো কাজ করবেই, এর বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। শুধু তাই নয়, স্ব স্ব পরিবারেরও খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাব সদস্যদের পেশাদারিত্ব, মেধা দক্ষতা, দেশপ্রেমের মনোভাবের ফলে স্বল্প সময়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার, চরমপন্হি দমন, ভেজালবিরোধী অভিযানসহ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের মানুষের মাঝে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব। অন্যান্য দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে র্যাব মানুষের আস্থা-শ্রদ্ধা অর্জন করেছে।
জঙ্গিবাদকে কোনোভাবে বরদাস্ত করা যাবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মের নাম করে কিছু মানুষকে বিপথে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। কোমলমতি, উচ্চ শিক্ষিত, অর্থ-সম্পদশালী পরিবারের সদস্যরাও এই বিভ্রান্তির বেড়াজালে পড়ে যায়। তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা, মানুষ হত্যা করলেই নাকি স্বর্গে/বেহেশতে চলে যাবে। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের সম্ভাবনাময় মেধাবী অনেক ছেলে-মেয়েকে তারা বিপথে নিয়ে গেছে বা যাচ্ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। এদেশে কোনোভাবে জঙ্গিবাদকে বরদাস্ত করা যাবে না। র্যাবসহ সকল বাহিনীর সমন্বয়ে ও প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশকে কেউ যেন, জঙ্গি সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে অপপ্রচার চালাতে না পারে। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে, দেশের উন্নতির যে ধারাবাহিকতা তা যে অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এগিযে যাবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে কোনোরকম জঙ্গি সন্ত্রাসের স্থান নাই। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ধর্মীয় উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে জঙ্গি তৎপরতা চালানো হয়। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী তাদের ধর্ম দেশ নাই। তাদের দেশ নাই, জাতি নাই, কিছুই নাই। তারা জঙ্গি, তারা সন্ত্রাসী। তারা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু, জাতি ও দেশের শত্রু।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ পথ (জঙ্গিবাদ) সম্পূর্ণ ভুল পথ। এ পথে যেন কোনো ছেলে-মেয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে সমগ্র জাতিকে সচেতন করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি সে সম্পর্কে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আরও সজাগ করে দিতে হবে। সকল অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ঈমাম থেকে শুরু করে ধর্মীয় শিক্ষাগুরুসহ সকলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুললে জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, প্রত্যেক বাবা-মাকে খবর রাখতে হবে ছেলে-মেয়ে কোথায় যায়। সামজে অনেক অর্থশালী বিত্তশালী আছেন যারা টাকার পেছনে ছুটে বেড়ান। তাদের ছেলে-মেয়েরা কোনো কিছু দাবি করলে হাতে একগুচ্ছ টাকা গুজে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চান। কিন্তু তাদের সন্তানেরা কে কোথায় যাচ্ছেন? সে খোঁজ খরব রাখে না। ফলে তাদেরই সন্তান সন্ত্রাসী, মাদক, জঙ্গির পথে চলে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। কেউ বেশি দিন অনুপস্থিত কি না। কেন থাকছে তা খোঁজ রাখতে হবে। কেউ জ্বরে পড়েছে কি না। শুধু শহর ভিত্তিক নয়, গ্রাম পর্যায়েও এ খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
র্যাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশে সৌন্দর্য্য। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। জলদস্যু নিয়ে অনেক অভিযোগ শুনেছি। তবে র্যাব কঠোর অবস্থানে থেকে জলদস্যুদের দমন করেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছে। তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমি আহ্বান জানাই, যারা জলদস্যু হিসেবে আছেন, বিভিন্ন দস্যুতার সাথে আছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। আপনাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাহলে কেন আমাদের খাদ্যে ভেজাল দিতে হবে বা কেন নকল জিনিস তৈরি করতে হবে? এসব প্রশ্ন তুলে ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্নফাঁসরোধে র্যাবের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নফাঁস রোধকল্পে র্যাবের উপস্থিতিটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রশ্নফাঁস রোধে মন্ত্রণালয়, বোর্ডসহ সবাই কাজ করছে। তবে র্যাবের ভূমিকা ভীতি তৈরি করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের উপকার যেমন পাচ্ছি তেমনি অপকারিতাও লক্ষ্যণীয়। যেমন প্রশ্নফাঁস। নকল ধরার ক্ষেত্রেও আমরা সাফল্য পাচ্ছি।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আছাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারী, সেনা, নৌ, বিমান বিজিবি, গোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/আরএস/আরআইপি