কোলের ছেলে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে দেখেন মেয়ে, তোলপাড়

সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশিত: ০১:৩৪ এএম, ০২ মে ২০১৮

‘জন্মের পর বউয়ের কাছে যখন বাচ্চাটারে দিল তখন ধাত্রী বললো অাপনাদের ছেলে হয়েছে...! এই খুশিতে ২০০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকা দিলাম তারে (ধাত্রী)। এরপর বাচ্চাটারে কোলে নিয়া যখন অবজারভেশন রুমে ডাক্তারের কাছে গেলাম তহন ডাক্তার কইলো অাপনাদের কাগজে তো লেখা অাছে ছেলে কিন্তুু অানছেন তো মেয়ে! এই মেয়ে কার? কোথায় থেকে অানছেন! ডাক্তারের এমন কথা শুনেই মাথা চক্কর দিয়ে পুরো শরীর দিয়া ঘাম ঝরতে লাগলো, মনে মনে বলতেছি ডাক্তার এটা কী কইলো!’

এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন অার ডাক্তারকেই বা কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না সদ্য পিতা হওয়া মো. শরিফ। কারণ তিনি শুনেছেন তার ছেলে হয়েছে এবং চিকিৎসাপত্রেও ছেলে লেখা হয়েছে। অথচ অবজারভেশন চিকিৎসক বলছেন মেয়ে হয়েছে। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখেন অাসলেই তার কোলের বাচ্চাটি মেয়ে শিশু। এতক্ষণে তার মনে হলো সন্তান বদল হয়ে গেছে। তাই তিনি হাসপাতালের ডাক্তার অার নার্সদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তার ছেলে সন্তান খুঁজতে লাগলেন। কিন্তুু কেউ তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। সবাই বলছেন প্রথমে যেটিকে ছেলে বলা হয়েছে সেটি মূলত মেয়েই ছিল। ধাত্রী হয়তো মেয়েকে ছেলে বলে বেশি টাকা বকশিস নিতে চেয়েছিল।

এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ঘটনা নিয়ে পুরো হাসপাতাল এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। সকলেই বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, ছেলে শিশু কীভাবে মেয়ে হয়? এটা কীভাবে সম্ভব? যে ধাত্রী এবং চিকিৎসক তার সন্তান ডেলিভারির সময় ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে হয়তো মেয়ে শিশুকে ছেলে শিশু ভেবেছেন। অাবার অনেকেই ধারণা করছেন, হয়তো কেউ টাকার বিনিময়ে তার ছেলে শিশুকে পরিবর্তন করে মেয়ে শিশু এনে দিয়েছেন। এ ঘটনায় সন্তানটির পুরো পরিবার অর্থাৎ শরিফের স্বজনরা অভিযোগ করছেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের ছেলে সন্তানটি বদল করে মেয়ে সন্তান দেয়া হয়েছে।

d

সোমবার (৩০) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুকি নামে একজন সন্তান-সম্ভাবা নারীকে ভর্তি করা হয় ঢামেকের ২১২ ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে। দিবাগত রাত ৩টা ২৭ মিনিটে একটি সন্তান জন্ম দেন তিনি। কিন্তুু সন্তানটি ছেলে না মেয়ে তা নিয়ে ভোর ৪টা থেকেই শুরু হয় তোলপাড়। মাত্র অাধা ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় সন্তানটিকে নিয়ে হইচই।

কারণ খুকি সন্তান জন্ম দেয়ার পর সেখানে থাকা ধাত্রী স্বজনদের কোলে বাচ্চাটি তুলে দিয়ে বললেন তাদের ছেলে হয়েছে। এজন্য টাকাও দাবি করেন সন্তানের বাবা শরিফের কাছে। ২০০ টাকা দিতে চাইলে ছেলে হয়েছে বলে ওই ধাত্রী অারও টাকা চান বলে অভিযোগ করেন শরিফ। এ জন্য তাকে ৫০০ টাকাও দেয়া হয়। এরপর টাকা নিয়ে বাচ্চাটিকে গোসল করাতে তাদের কাছ থেকে অাবার নিয়ে যায় ওই ধাত্রী। অাধা ঘণ্টা পর গোসল করিয়ে এনে বাচ্চাটিকে তাদের কাছে দিয়ে চলে যায় ওই ধাত্রী।

সদ্য পিতা হওয়া শরিফ অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ধাত্রী বাচ্চাটাকে গোসল করিয়ে অামার কাছে দিয়ে বললেন, ২১৪ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে অবজারভেশন করাতে। সঙ্গে একটা কাগজ (ডেসক্রিপশন) দিলেন ডাক্তারকে দেয়ার জন্য। ওই কাগজ ডেলিভারির সময় যে ডাক্তার ছিলেন তাদের লেখা কাগজ। সেই কাগজ নিয়ে যখন ২১৪ নম্বর রুমে গিয়ে ডাক্তারকে দিলাম তখন তিনি বললেন, এটা তো ছেলের কাগজ কিন্তুু অাপনার কোলে তো মেয়ে বাচ্চা। এটা কোথায় থেকে এনেছেন। যান অাপনার বাচ্চা নিয়ে অাসেন অার এটা দিয়ে অাসেন।

d

শরিফ জানায়, ডাক্তারের এমন কথায় সে দ্রুত ওই রুম থেকে বের হয়ে অাবারও ২১২ নম্বর রুমে গিয়ে নার্সদের কাছে জানতে চান তাদের বাচ্চা কোথায়? কোলের শিশুটি তাদের বাচ্চা নয়। এমন কথা শুনে নার্সরা তাকে কোনো জবাব দিচ্ছিলেন না। পরে সে চিকিৎসকের কাছে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বলছেন, ওই মেয়ে শিশুটাই তার। চিকিৎসকরা ভুল করে ছেলে লিখে ফেলেছে। কিন্তুু এত বড় ভুল হবার কথা নয় বলে জানান শরিফ।

তিনি অারও জানান, তার স্ত্রীকে ঢামেকে অানার অাগে সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা অাল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেন পেটের বাচ্চার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তাই তারা ঢামেকে রেফার করেন। শরিফের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজগুলোও এখানকার নার্সরা টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলেছে। ওই কাগজপত্রগুলো তাকে দেয়নি। সবগুলো লুকিয়ে ফেলেছে।

তার অভিযোগ, যদি তার ছেলে সন্তান না হয় তবে কেনো তার কাগজপত্রগুলো তাকে দেয়া হলো না? সেগুলো কেন ছিঁড়ে ফেলা হলো এবং প্রথমে কাগজে ছেলে লিখে এক ঘণ্টা পরে ওই কাগজে কেন ছেলের নাম কেটে মেয়ে লিখলো। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেও ভোর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্তও কোনো সদুত্তর পেলেন না শরিফ। তাই বিকেলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, অাইনি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনে বাচ্চার ডিএনএ টেস্ট করাবেন তিনি।

d

তবে বাচ্চা বদলের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ঢামেকের উপ-পরিচালক শাহ অালম তালুকদার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এমন একটা অভিযোগ অামরা পেয়ে সকাল থেকে বিভিন্নভাবে তদন্ত করলাম। কোনোভাবেই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়নি।

তিনি বলেন, গত ২৯ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে পরের দিন অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের নারী ও নবজাতক ওয়ার্ডে মোট ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জন নরমাল ডেলিভারি এবং ৬ জনের বিভিন্ন অপারেশন করা হয়েছে। বাকি একজনকে ডিএনসি করা হয়েছে। এছাড়া ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালে মাত্র দুইজন রোগীর ডেলিভারি হয়েছে। একজন নরমাল ডেলভারি অপরজন সিজারিয়ান। নরমাল ডেলিভারি রোগিটাই হলেন খুকি। তার যে সময় ডেলিভারি হয় সে সময় অন্য কারও ডেলিভারি হয়নি। কারণ তার ডেলিভারির তিন ঘণ্টা পর সিজারিয়ান রোগী দুটি জমজ সন্তান জন্ম দেয়। এতে স্পষ্ট যে ওই মেয়ে বাচ্চাটি তাদেরই। তবে চিকিৎকরা হয়তো ভুল করে মেয়ের জায়গায় ছেলে লিখে পেলেছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এসএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।