বৈশাখেই শ্রাবণের ঘনঘটা

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

‘মুক্ত করি দিনু দ্বার--আকাশের যত বৃষ্টিঝড়
আয় মোর বুকে,
শঙ্খের মতন তুলি একটি ফুৎকার হানি দাও
হৃদয়ের মুখে।
বিজয়গর্জনস্বনে অভ্রভেদ করিয়া উঠুক
মঙ্গলনির্ঘোষ,
জাগায়ে জাগ্রত চিত্তে মুনিসম উলঙ্গ নির্মল
কঠিন সন্তোষ।’

প্রকৃতির পূজারী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখ বন্দনা করেছেন এভাবেই। বৈশাখী রূপে সেজেছে ধরা। বর্ষবরণের প্রাতকালে রমনার বটমূলে বৈশাখ আগমনের যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, বিকেলেই তার ফল ফলেছিল। ঝড়ো হাওয়ায় প্রকৃতিপ্রেমীরা সেদিন মাতাল বনে গিয়েছিলেন। বৃষ্টির উম্মাদনায় খুলেছিল হৃদয়ের জানালা।

সেই যে বৈশাখী দমকা, তার ঝাপটা যেন এখনও বহমান। গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষ, আর বর্ষা পেরিয়ে শ্রাবণ। অথচ বৈশাখের মধ্য প্রহরেই যেন শ্রাবণের ঘনঘটা। কৃষ্ণময় আকাশ। দিনভর ভারি বৃষ্টি। বৈশাখের মাতাল ঝড়ে লণ্ডভণ্ড প্রকৃতি।

‘এই মেঘ এই বৃষ্টি’। সাধারণত এটি বর্ষা বা শ্রাবণের রূপ। নতুবা সাগর ঘেঁষা পর্বতমালায় মেঘ-বৃষ্টির এমন খেলা। অথচ বৈশাখেই এমন রূপে সেজেছে প্রকৃতি।
ঋতু রূপের এমন পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে। গবেষকরা তা করতেই পারেন। কিন্তু মানব মনে বৈশাখী রূপের জয়গান তো অনন্তকাল ধরেই।

রবীন্দ্রনাথ বৈশাখ আরও লিখেছেন-
‘আনন্দে আতঙ্ক মিশি, ক্রন্দনে উল্লাসে গরজিয়া
মত্ত হাহারবে
ঝঞ্ঝার মঞ্জীর বাঁধি উন্মাদিনী কালবৈশাখীর
নৃত্য হোক তবে।
ছন্দে ছন্দে পদে পদে অঞ্চলের আবর্ত-আঘাতে
উড়ে হোক ক্ষয়
ধূলিসম তৃণসম পুরাতন বৎসরের যত
নিষ্ফল সঞ্চয়’।

শীত আর বসন্ত বেলার রিক্ততা দূর করে গ্রীষ্ম আসে প্রকৃতিকে সবুজের সমারোহে সাজাতে। বৈশাখ বৃষ্টিতেই পত্রপল্লব সবুজে সবুজে ভরে যায়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সবুজের ডানায় ভর করে নির্মল হাসির বাণ ছুটেছে প্রকৃতিতে। তাতে প্রাণ মিলিয়েছে মানুষেরাও।

তবে বৈশাখীর অগ্নিরূপে আতঙ্কও ছড়াচ্ছে। বিজলী-ঝড়ে প্রাণ যাচ্ছে। বৃষ্টিতে জনজীবন আটকে যাচ্ছে। তাই তো এবেলায় কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বৈশাখী রূপে জীবনের হাহাকার গেঁথে দিয়েছেন। লিখেছেন-
‘বৈশাখী মেঘ ঢেকেছে আকাশ,
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ আর কতদিন?
নীল অভিমান পুড়ে একা আর কতটা জীবন?
কতটা জীবন’!!

খানিক ভয় থাকলেও বৈশাখে মন যেন ঘরে ঠিক আটকে থাকে না। ‘ওরে আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’ কবি গুরুর এ নিষেধাজ্ঞা যেন হৃদয়ে আরও ঝড় তোলে। উতাল-পাতাল মন মিলিয়ে যায় দূর থেকে দূর প্রান্তরে।

স্বামীর টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছেন হেমলতা। পরিবারের অন্যরাও আছেন সঙ্গে। বৈশাখ উন্মাদনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হেমলতা লিখেছেন, ‘বৈশাখে সমুদ্র বুক যেন আরও যৌবনা। দমকা হাওয়া আর ঢেউয়েরা মিলে কি যেন ঘটাচ্ছে! ঢেউয়ের গর্জনে ভয় লাগে বটে, তবে প্রাণ খুলছে ক্ষণে ক্ষণে। বৈশাখে না এলে সুমদ্রের এমন মাতাল রূপ দেখতে পেতাম না হয়ত।

এএসএস/এমআরএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।