গণপরিবহনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

গণপরিবহন খাতকে সবপ্রকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলছেন, শক্ত হাতে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে হবে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সড়ক দুর্ঘটনাবিরোধী মানববন্ধন ও সমাবেশে’ রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক নেতা ও আইনজীবীসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা এসব কথা বলেন। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজ করে।

অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য গণপরিবহন খাতের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে দায়ী করে বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাস মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতাই মন্ত্রী। ফলে বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। সাধারণ মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা নয়, তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য শুধুই মুনাফা অর্জন।

বাংলাদেশের পরিবহন শ্রমিকরা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালিকদের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী আর শ্রমিকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না।

সব ধরনের গণপরিবহনে চাঁদাবাজি রোধ এবং বাসের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াবাবদ নগদ টাকা নেয়া বন্ধ করে স্টপেজভিত্তিক কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তিনি।

road-accident-2

গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুর রহমান সেলিম বলেন, গণপরিবহন খাতকে সবপ্রকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শক্ত হাতে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরে জাতিকে দুর্ঘটনার অভিশাপ মুক্ত করতে হবে।

সাংবাদিক নেতা রাজু আহমেদ বলেন, ১৩ লাখ লাইসেন্সবিহীন চালক সারাদেশে যানবাহন চালাচ্ছেন। এসব অবৈধ চালককে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দেন তিনি।

সাংবাদিক নিখিল ভদ্র বলেন, দুর্ঘটনায় যারা নিহত হন, তারা তো মরেও বেঁচে যান। কিন্তু তার স্বজনরা চরম অসহায় হয়ে পড়েন। আর যারা পঙ্গু হন, তাদের সারাজীবন এই অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হয়, বেঁচে থাকতে হয় পরিবারের বোঝা হয়ে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল বলেন, দু-চারজন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ বা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব সুযোগসন্ধানী ও অর্থলোভী মালিক-শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যাতে তারা চাপমুক্ত হয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন।

মানববন্ধনে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মালিক ও শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধে দেশের সব বাস ও ট্রাক টার্মিনাল চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে।

শ্রমিকসহ সব ধরনের পরিবহনকর্মীদের বেতন-ভাতা, সাপ্তাহিক ছুটি, দৈনিক কর্মঘণ্টা নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউয়ের সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাজন ভট্টাচার্য, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) যুগ্ম মহাসচিব লায়ন মো. গণি মিয়া বাবুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মশিউর রহমান, ডিআরইউয়ের সহ-সভাপতি গ্যালমান শফি, সাবেক অর্থ-সম্পাদক রেজাউল করিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কার্যনির্বাহী সদস্য সাকিলা পারভীন রুমা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়া প্রমুখ।

এএস/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।