ট্রাইব্যুনালের রায় পাঠকে সহীহ হাদিস বলেছিলেন সাকা


প্রকাশিত: ০৪:১১ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সকাল পৌনে ১১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় পাঠ করেছিলেন বিচারতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে রায় পাঠ শুরু করে প্রায় দুই ঘণ্টায় মামলার রায় ঘোষণা শেষ করেন আদালত।  রায় পড়ার পুরো সময় জুড়ে তিনি অবিরাম কথা বলতে খাকেন।

তার বিরুদ্ধে রায় পাঠ করার সময় ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় বসা সাকা বলেন সবাই চুপ কর সহীহ হাদীস পাঠ চলছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় পড়া সহীহ হাদিসের মতো শুনতে হয়।

তার পরেই তিনি বলেন, দুই লাইন পড়ে বাকী টুকু লিংঙ্কে দেখুন বলে শেষ করলেই তো ভাল হয়। কারণ গতকাল তো রায়ের কপি ফাঁস হেয়ে গেছে। কষ্ট করে রায় পড়ার দরকার কি।

মুখাবয়বে তাচ্ছিল্য, তীর্যক হাসি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, কটূক্তিপূর্ণ ও মুখরোচক মন্তব্য নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচিত ও আলোচিত রাজনীতিক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

মানবাতবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানিতে আদালতে দাঁড়িয়েও বিভিন্ন সময়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন ছয়বারের এই সংসদ সদস্য, যা মামলার রায়েও উঠে এসেছে।

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন সারা দেশে সাকা চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। রাজনৈতিক জীবনে কয়েকটি দল ঘুরে সর্বশেষ তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন।

তবে দলীয় প্রধান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করে দলের ভেতরেই আলোচিত সমালোচিত ছিলেন তিনি। তারেকের কর্মকাণ্ডে খালেদার নীরব সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে সাকা বলেন, আগে কুকুর লেজ নাড়াত, এখন লেজ কুকুরকে নাড়ায়। আবার বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে তালাকপ্রাপ্ত বউয়ের ঘর করি না আমি -মন্তব্য করেও দলে ক্ষোভের মুখে পড়েন সাকা চৌধুরী।

তার আশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ২০১৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় নিজে জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, আমি গ্রেনেড মারলে সেটাতো মিস হত না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ছাত্রজীবনে শেখ মুজিব আমার বাবার শিষ্য ছিলেন।

আওয়ামী লীগের একটি মহল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাকে উস্কে দিচ্ছে অভিযোগ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ওই মহলটি জানে না যে তারা যে বিলের মাছ, আমি ওই বিলের বক।”

গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওআইসিএর মহাসচিব পদে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়। এর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।

জবাবে সাকা বলেন, বাবু ওআইসি নিয়ে কথা বলার কে? উনাকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে হলে, আমি ছোট বেলায় যে জিনিসটা কেটে ফেলে দিয়েছি, আগে ওই জিনিসটা কেটে ফেলতে হবে। তারপর বাবুকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে বলেন।”

নারী নির্যাতন বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাকা চৌধুরী বলেন, তিনি কেরানীগঞ্জের একজন প্রমোদ বালক- এটা কি আমি কখনও বলেছি?

নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই’ উল্লেখ করেন সাকা চৌধুরী। অসত্য তথ্য দেয়ায় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ খারিজের উদ্যোগ নেয় বিগত নির্বাচন কমিশন। সে সময় নির্বাচন কমিশনকে গমচোর বলে আখ্যা দেন তিনি। তার আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানালেও আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর এগোয়নি।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালেও নানা তীর্যক মন্তব্য করেন সালাউদ্দিন কাদের। ২০১৩ সালের ১৭ জুন থেকে নিজের প্রথম সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন বিএনপির এই নেতা। আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আমার না হলে, ফাঁসি কারো হবে না।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেয়ার আদেশ দেয়ার পর ২০১৩ সালের ১৩ জুন সালাউদ্দিন কাদের বলেন, আর যাই করেন আমাকে কলকাতার জেলে পাঠাবেন না। ২০১৩ সালের ৩০ জুন নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষীর জবানবন্তিতে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক হলে আমিও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সাকা বলার যৌক্তিকতা তুলে ধরে গত বছর ২৩ জানুয়ারি প্রসিকিউটর জেয়াদ-আল-মালুম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, সাকা আমাকে হালুম বলেন।

১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, সালাউদ্দিন কাদের ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিচার চলাকালে আদালতের প্রতি তার আচরণ ছিল অসম্মানজনক। তবে এ বিষয়টি রায়ে প্রভাব ফেলেনি বলে উল্লেখ করেন বিচারক।

হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। বুধবার তার আপিলের চুড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।

এফএইচ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।