ডিসি আনোয়ারের শাস্তির দাবিতে ডিএমপি’র গেটে সাংবাদিকদের অবস্থান
বাংলাটিভির সাংবাদিকের ওপর পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে সাংবাদিকরা।
মঙ্গবার দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের গেটের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এসময় তারা মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনকে ক্লোসড ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নির্বাহী সদস্য ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রিপোর্টার গোলাম মুজতবা ধ্রুব জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই। দেশের চলমান অবস্থায় পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ করতে যেতে হয়। পুলিশের এমন আচরণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ডিসির মতো একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে কোনোভাবেই এ ধরণের আচরণ করতে পারেন না। প্রাথমিকভাবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনের শাস্তি দাবি করি। তাকে ক্লোসড করার দাবি জানাই।
চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদ নিজাম বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা দরকার। এ পর্যন্ত সাংবাদিকদের ওপর যতোগুলো হামলা হয়েছে তার একটিতে কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা ও লাঞ্ছনার ঘটনায় ডিসি আনোয়ার এবং তার ফোর্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার দীপন দেওয়ান বলেন, এর আগে শাহবাগ মোড়েও সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেয় পুলিশ। সে ঘটনার কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। গতকাল পল্টনের ঘটনায় সাংবাদিকের হাতে মাইক্রোফোন (বুম) ক্যামেরা দেখার পরও পুলিশ তাদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পৈশাচিক হামলা চালায়। আমরা ডিসি আনোয়ারের দৃশ্যমান শাস্তি চাই। এ ঘটনার জন্য তাকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।
এশিয়ান টিভির ক্রাইম রিপোর্টার লাইজুল ইসলাম বলেন, ডিসি বলেছেন- বাংলা টিভি নামে কোনো টিভি আছে সেটা নাকি তার জানা নাই। আবার বলেছিল বাংলা টিভি নাকি উস্কানি দিয়েছে। একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি কোনোভাবেই একথা বলতে পারেন না। ডিসি আনোয়ারের বিরুদ্ধে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে আর কোনো সাংবাদিক পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত না হয়।
অবস্থান কর্মসূচির পর চার দফা দাবিতে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে স্মারকলিপি প্রধান করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত সোমবার নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির মিছিলের সংবাদ সংগ্রহের সময় বাংলা টিভির রিপোর্টার আরমান ও ক্যামেরাপারসন মানিক নির্যাতনের শিকার হন। এতে নেতৃত্ব দেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন ও তার ফোর্স। দায়িত্বরত অবস্থায় একজন সংবাদকর্মীকে যেভাবে প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হয়েছে। তা একটা পেশাদার বাহিনীর জন্য লজ্জার। আপনার কার্যকালে গত তিন বছরে ঢাকায় পুলিশ কর্তৃক আরও বেশ কয়েকটি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন এবং ক্লোজড করার মতো হাস্যকর কিছু শাস্তির ব্যবস্থা আমরা দেখেছি। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। কোনো সাংবাদিক দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত করেছে এমন ঘটনা ইতিহাসে দুষ্কর। সোমবারের ঘটনা সামনে রেখে অতীতের সকল নির্যাতনের ঘটনার শাস্তি দাবি করছি। অতি দ্রুত বাংলা টিভির রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসনসহ বিএনপি অফিসের সামনে নির্যাতনের শিকার হওয়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় দোষী ডিসি মতিঝিল ও তার অধস্তন পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করছি।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিএনপির বিভোক্ষ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়ায় পুলিশ। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলা টিভির রিপোর্টার আরমান ও ক্যামেরাপারসন মানিককে হেনস্তা করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও তাদেরকে পুলিশ গাড়িতে তুলে পল্টন থানায় নিয়ে যায়। অবশ্য পরে অন্যান্য মিডিয়ার সাংবাদিকরা থানায় উপস্থিত হলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এআর/জেইউ/এমবিআর/আরআইপি/এমএস