মিল্কী হত্যাকাণ্ড : দুই বছরেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি
রাজধানীর চাঞ্চল্যকর মিল্কী হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পেড়িয়ে গেলেও তদন্ত সম্পন্ন ও চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে সিআইডি বলছে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য না থাকায় অধিকতর তদন্ত কাজ আটকে আছে।
সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, প্রথম তদন্ত কাজ র্যাব করেছে। তদন্তের ভার নতুন করে সিআইডি পেলেও কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি র্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উত্তরা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার দাশ বলেন, “প্রথম দফায় র্যাব চিঠির কোনো উত্তর না দেয়ায় দ্বিতীয়বার তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তের স্বার্থে অসহযোগিতা সম্পর্কে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জানানো হয়, সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো চিঠিই তারা পাননি। পরে আবার মোবাইলফোনে কল দিয়ে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়, সিআইডির পক্ষ থেকে যা যা তথ্য চাওয়া হয়েছিল তা র্যাব যথা সময়েই অফিসিয়ালি জানিয়েছে।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড শপিং মলের সামনে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী খুন হন। ঘটনার পর মিল্কীর ভাই মেজর রাশেদ বাদী হয়ে জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ওরফে কিলার তারেকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রাতেই র্যাবের হাতে আটক হন তারেক। দু’দিন পর তিনি র্যাবের হেফাজতেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ঘটনার পর মামলাটির তদন্ত দায়িত্ব পায় র্যাব। তদন্ত শেষ করে ২০১৪ সালেল ১৫ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দেয় র্যাব। তবে সে সময় মামলার বাদী মেজর রশিদুল হক খান মিল্কী না রাজি দিলে আদালত ওই বছরের ৬ জুন মামলাটির পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পেলেও পায়নি গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র। রিয়াজুল হক খান মিল্কীর ব্যবহৃত মোবাইলের সিজার লিস্ট, মামলার মূল আসামি ও হত্যাকেণ্ডে অংশ নেয়া তারেকের মৃত্যুকালীন জবানবন্দীর তথ্য ও র্যাবের কাছে বাদীর মোবাইল জমা দেয়ার তথ্য নেই সিআইডির কাছে। এসব তথ্য চেয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে চলতি বছরের গত ২৩ জুন র্যাব মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।
সিআইডির দাবি, মিল্কীর ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। মোবাইলফোনটি মামলার বাদী নিজ হাতে র্যাব-১ এর তৎকালীন অধিনায়ক কিসমত হায়াতের কাছে দিয়েছিলেন। পেলে মোবাইল ফোনটির সিজার লিস্ট ধরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারতো। গত এক সপ্তাহ আগে সিআইডির দাবি ছিল র্যাবের কাছে ওই মোবাইলটি সিআইডি চেয়েও পায়নি।
মামলার মূল অভিযুক্ত তারেক র্যাবের হেফাজতে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দীর কোনো নথি সিআইডি পায়নি। তবে সিআইডি বলছে, খুনিদের দুটি পাজারো, একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল এবং ওই গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিক কারা এ বিষয়ে তথ্যাদী সিআইডির কাছে হস্তান্তর করেছে বিআরটিএ।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনে র্যাব বরাবর তাগিদ চিঠি পাঠানো হয়। তবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র্যাবের কোনো জবাব মেলেনি।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে যোগাযোগ করা হলে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো চিঠিই পায়নি র্যাব। সে সময় তিনি বলেন, সিআইডি চাইলে অবশ্যই র্যাব সহযোগিতা করবেন বলে জানান।
পরে তিনি সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে এই প্রতিবেদকের মোবাইলে কল দিয়ে বলেন, সিআইডির পক্ষ থেকে যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা সবই অফিসিয়ালি জানানো হয়েছে। এসময় তিনি চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেন, সিআইডির চিঠির জবাব দিয়ে ফিরতি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ একইভাবে প্রথমবার প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে যান। পরে তিনিও কল ব্যাক করে জানান, র্যাব সদর দফতরকে মিল্কী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয় জানানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উত্তরা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার দাশ জাগো নিউজকে বলেন, “মিল্কী হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের স্বার্থে র্যাবকে পুনরায় তাগিদ চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে চিঠির উত্তর এখনো পাননি। তবে র্যাবের পক্ষ থেকে একটি আসার কথা জানতেও তা এখনো হাতে পাননি।”
মামলার বাদী মেজর রশিদুল হক খান মিল্কী জাগো নিউজকে বলেন, “যারা হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছে তারা জামিনে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ সিআইডি নতুন করে তদন্ত শুরু করলেও তাও বছর পেড়িয়ে গেলো। কিন্তু চার্জশিটও হয়নি। হত্যাকারীদের বিচার নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
র্যাব ও সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পর দায়ের করা মামলার এজহারের সাত আসামিকে বাদ দিয়ে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে এক বছর আগে চার্জশিট দিয়েছিল র্যাব। নতুন করে আরো আটজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার এজহারে ১১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল যাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। বাকি সব আসামিই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
জেইউ/বিএ