মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছরই থাকবে : চুমকি
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি মেয়েদের বিয়ের বয়স সম্পর্কে কোন প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর ছিলো, ১৮ বছরই থাকবে। এর কোন নড়চড় হবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্র্যাক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ এই সমাবেশে একটি কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার নারী বান্ধব সরকার। নারীর ক্ষমতায়নকে এই সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এই সরকারের আমলে নারী বিরোধী কোন আইন হবে না। হতে পারে না। তাই মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর ছিলো, ১৮ বছরই থাকবে। এর কোন নড়চড় হবে না।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন; সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মিলি বিশ্বাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী, উইমেন ফর উইমেন এর চেয়ারপারসন জাকিয়া হাসান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সারা কুকি এবং গণমাধ্যমকর্মী ফারজানা রূপা।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের ‘মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব’ কর্মসূচি আয়োজিত এ ‘বাল্য বিবাহ নির্মূলকরণে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ডাইভারসিটি অ্যান্ড মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শীপা হাফিজা।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাল্যবিয়ের কারণগুলো চিহ্নিত না হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবেনা। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বর্তমান সরকার সমস্যার মূলে হাত দিয়েছে। এগুলো বিবেচনায় রেখেই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাই বিবাহ সংক্রান্ত আইনের ‘তবে’ এবং ‘কিন্তু’র প্রশ্ন তুলে আপনারা আর দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করবেন না। এতে আমাদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
দারিদ্র, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অভিভাবকদের অজ্ঞতা, অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি কারণকে বাল্যবিয়ের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব কারণেই সরকার আইনের বাস্তবতা খতিয়ে দেখছে।
তিনি এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বাল্যবিবাহ বন্ধে নোটারি পাবলিকের এভিডেভিট বাতিল করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিয়ের ক্ষেত্রে নোটারি পাবলিকের কোন জন্মসনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে তিনি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও যুব সমাজের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ মুসা বলেন, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ ও পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলেই কেবল বাল্যবিয়ে নির্মূলকরণ করা সম্ভব।
সর্বস্তরের জনগণের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তারা কোন শর্ত ছাড়াই ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যেন কারোর বিয়ে না হয়, সে ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
দেশব্যপী জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজি), ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নারী আন্দোলন ও মানবাধিকার সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মূল্যবান মতামতের ভিত্তিতে এ সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়।
এসএইচএস/আরআইপি