ত্রিভুবন ট্র্যাজেডির ‘দুই মিনিট’ নিয়ে অসংগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮

নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটির উদ্ধার কাজ দুই মিনিটের মধ্যে শুরু করা হয়েছিল বলে দেশটির প্রাথমিক তদন্তে দাবি করা হলেও তা ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ। স্টাফ ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দুই মিনিটের মাথায় উদ্ধারকাজ শুরু করা হলে আরও যাত্রীর প্রাণ বাঁচত।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান আসিফ এ দাবি করেন। সম্প্রতি নেপালের তদন্ত কমিশন ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ইমরান আসিফ বলেন, বিধ্বস্তের আগে ত্রিভুবনে ইউএস-বাংলার স্টাফরা উড়োজাহাজটি অবতরণের অপেক্ষা করছিল। সেসব স্টাফ এবং বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা বলেছেন, দুই মিনিটে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাননি। উদ্ধারকাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। আর যে জায়গায় বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সেখানে দুই মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব বলেও মনে হয়নি।

নেপালের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, রিপোর্টটিতে কিছু অসংগতি আছে। প্রাথমিক রিপোর্টে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) টাওয়ারের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। রিপোর্টের এ বিষয়টি আমাদের অড (বেমানান) লেগেছে। আমরা রিপোর্টটি অগ্রাহ্য করছি না কিন্তু ৩০ দিন অনেক সময়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ৩০ দিন পর রিপোর্টে আরও অসংগতি বের করা যেত।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা (সাংবাদিকরা) ত্রিভুবনের এটিসি টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের আন-অফিসিয়াল অডিওটি শুনেছেন। টাওয়ার থেকে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর নির্দেশা দেয়া হয়েছিল। কাঠমান্ডুর টাওয়ার থেকে ইউএস-বাংলার বৈমানিক ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স প্রদান করার পর সেই ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই এয়ারক্রাফটিকে অন্যত্র হোল্ডিং করতে বলা হয় এবং একই সময় অন্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি অবতরণ করতেও দেয়া হয়। একটি ফ্লাইটকে দেয়া ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই অন্য ফ্লাইটকে অবতরণ বা উড্ডয়ন করতে দেয়াও আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন।

ইমরান আসিফ বলেন, ‘রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে সময় ২৫ সেকেন্ডের জন্য ককপিটের সঙ্গে টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এটি স্বাভাবিক। কেননা সাধারণত ফাইনাল ল্যান্ডিং অ্যাপ্রোচের সময় টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের কথাবার্তা হয় না।’

রিপোর্টে একটি তথ্য থাকা উচিৎ ছিল উল্লেখ করে ইমরান আসিফ বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বরত ৬ জন কন্ট্রোলারকে তড়িঘড়ি করে দুর্ঘটনার পরদিন বদলির আদেশ দেয়া হয়। তাদের কেন বদলি করা হয়েছে তা আমরা জানি না। তবে গাফলতি ছাড়া এমন পদক্ষেপ নেয়া স্বাভাবিক নয়। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে তাদের ব্যাপারে কোনো কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।’

‘অবতরণের সময় ইউএস-বাংলার প্লেনটির অ্যালাইনমেন্ট (নির্দিষ্ট স্থান বরাবর) ঠিক ছিল না।’ সম্প্রতি বাংলাদেশি তদন্ত সংস্থার এক কর্মকর্তার গণমাধ্যমে দেয়া এমন মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউএস-বাংলার সিইও বলেন, নেপালের অফিসিয়াল তদন্ত কমিশনে অ্যালাইনমেন্টের বিষয়ে কিছু লেখা নেই। তাই এ বিষয়ে আমাদের কারও ধারণা করাটাও সঠিক নয়।

গত ১২ মার্চ নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬৭ জন আরোহী নিয়ে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। তাদের মধ্যে ৩৩ জন বাংলাদেশি, একজন মালদ্বীপ, একজন চাইনিজ এবং নেপালি ৩২ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সম্প্রতি ওই ঘটনায় একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নেপালে গঠিত তদন্ত কমিশন। প্রতিবেদনে বিমান বিধ্বস্তের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি, এমনকি ধারণাও দেয়া হয়নি।

এআর/আরএম/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।