ট্রাকচাপায় পিষ্ট সুজন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালে

সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮

দুপুর ১২টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকতেই বারান্দায় চোখে পড়ল- একজন তরুণ বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ কাতরাচ্ছে। দু’জন স্বজন তাকে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু খেতে চাচ্ছে না সে। তাই তাকে নিয়ে শঙ্কিত তারা। স্বজনরা বলছেন, ইনজেকশন দিয়ে এখন ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু ইনজেকশনের কার্যকারিতা কমে গেলে ব্যথা বাড়তে থাকে।

ওই তরুণের নাম মো. সুজন মোল্লা (১৫)। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক দোলা মোল্লার ছেলে। পরিবারের একমাত্র ছেলে সুজন স্থানীয় হাজী খোরশেদ সপ্তপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাম হাত ও ডান পা সাদা কাপড়ে ব্যান্ডেস করা। সেই সঙ্গে মাথায় প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

jagonews24

স্বজনদের কাছে জানতে চাইলে তারা জাগো নিউজকে জানান, গত ১৫ এপ্রিল কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বাইসাইকেল নিয়ে বের হয় সুজন। পথে পেছন থেকে তিনটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসে। তা দেখে ভয়ে সে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে দ্রুত সাইকেল থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু রক্ষা পায়নি তাতেও। একটি ট্রাক সুজনকে চাপা দেয়। এরপর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় সদর হাসপাতালে। সেখানে একদিন রাখার পরও তার চিকিৎসায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরদিন ১৬ এপ্রিল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সিটি স্ক্যান রিপোর্টে সুজনের মস্তিষ্কে রক্তজমাট রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সুজনের চাচা মো. নুর জাগো নিউজকে বলেন, সুজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তাকে পিষ্ট করে দানব ট্রাকটি। তিনি জানান, কৃষক বাবার একমাত্র ছেলের এমন অবস্থায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি। কিন্তু প্রতিদিন তার পেছনে ওষুধপত্রসহ অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ঘটনায় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ট্রাকটি স্থানীয়রা জব্দ করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে। তবে এর চালক ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ায় এখনও তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

jagonews24

এদিকে বিশেজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতিতে চলা এমন যানবহনের কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে শহর-নগর এমনকি জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদও। সর্বত্রই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। মরছে মানুষ। তবুও নেই প্রতিকার। উল্টো ক্রমেই বেড়ে চলেছে ঘাতক বাস-ট্রাকের বেপরোয়া গতি। তাই এমন ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বিভিন্ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১,৪২৯টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ১,৪৫৬ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪,৩৮০ জন। যাদের অধিকাংশকেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এসব দুর্ঘটনার জন্য বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই দায়ী বেপরোয়া গতি। চালকদের অসাবধানতার কারণে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ১৬ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ বাড়ছে।

এসএইচ/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।