উপজেলা চেয়ারম্যানের কথায় তালতলীর আইন : সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ


প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৫

বরগুনার তালতলী উপজেলার প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টুর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুন্দর আলী মঙ্গলবার সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, তালতলী বাজারের উপর তার ক্রয়কৃত একখণ্ড জমির উপর দৃষ্টি পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মিন্টুর।  চেয়ারম্যানের সেই লোভের বলী হয়েছেন তিনি (সুন্দর আলী)।

সুন্দর আলী জাগো নিউজকে জানান, তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টুর কথাই এখন তালতলীর আইন।  তিনি যা বলেন, যেভাবে বলেন সেভাবেই চলে পুরো তালতলী উপজেলা।  তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কোনো সাহস নেই তালতলীর পুলিশ প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনসহ কারোর।  

সুন্দর আলী আরও জানান, এসব কারণে তিনি নিশ্চিত যে, চেয়ারম্যান মিন্টু কর্তৃক তার নির্যাতিত হওয়ার চিত্র তালতলীর শতশত মানুষ দেখলেও প্রভাবশালী ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষিও তিনি খুঁজে পাবেন না।  তাই তিনি এখনো কোনো মামলা করেননি।     
 
সুন্দর আলী তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনার তালতলী বাজারের শতশত লোকের সামনে পেটাতে পেটাতে টেনে হিচড়ে নিজ কার্যালয়ে আটকে তাকে নির্যাতন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টু।  চারঘণ্টা ব্যাপী নির্মম নির্যাতন শেষে তার রক্তমাখা জামাকাপড় বদলে নতুন জামাকাপড় পড়িয়ে তারপর তার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্টে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন মিন্টু ও তার লোকজন।  এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা নির্যাতনকারী চেয়ারম্যান মিন্টুকে নিবারণ করতে পারেননি।  পরে দীর্ঘ নির্যাতনের পরে ছেড়ে দেয়া হলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তার স্বজনরা তাকে প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতালে ও পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক অধিবাসী জানান, এর আগেও চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টু বিভিন্ন সময়ে তালতলী থানা পুলিশের এসআই, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা শিক্ষক এমনকি তালতলী উপজেলার সাবেক একজন ইউএনওকেও মারধর করেছেন নিজ হাতে।  লোক লজ্জা, সামাজিকতা এবং প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টুর ভয়ে নির্যাতিতরা কেউই এসব বিষয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানান তারা।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুন্দর আলীকে নির্যাতনের বর্ণনা দেন তার স্ত্রী শামসুন্নাহার নাছিমা।  এসময় তিনি সাংবাদিকদের আরও জানান এ ঘটনায় কোনো মামলা না করার জন্যে তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে উপজেলা চেয়ারম্যান মিন্টু ও তার লোকজন।

এ বিষয়ে তালতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল আক্তার বলেন, ঘটনার সময়ে তিনি থানা থেকে দূরে ছিলেন।  তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি ফোন করে থানা থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে দেন।  মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুন্দর আলী এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।  তিনি অভিযোগ করলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।  তিনি আরও বলেন, নির্যাতিত পরিবার যদি তালতলী থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে সাহস না পায় তবে তার কার্যালয়ে এলে তিনি অভিযোগ নেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।