শঙ্কায় ৯৭৯ জন ছিটমহলবাসী


প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ২৮ জুলাই ২০১৫
ফাইল ছবি

ছিটমহলবাসীদের মধ্যে যারা অধিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় ভারত যেতে নাম নিবন্ধন করেছেন তাদের মনে এখন শঙ্কা কাজ করছে। সত্যিই কি তারা এসকল সুবিধা পাবেন নাকি হতে হবে প্রতারণার শিকার। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে ১২টি ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যে ভারতে যেতে আগ্রহী হয়েছে ৩১৭ জন। এদের মধ্যে ১৫৮ জন হিন্দু এবং ১৫৯ জন মুসলমান পরিবার রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহলে জনগণনার পর জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে ভারত যেতে নিবন্ধন করেছে ৯৭৯জন। অপরদিকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহল থেকে কেউ বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন ফুলবাড়ীর দাসিয়ারছড়া ছিটের কালিরহাট বাজারের শেফালী (২৪) বেগম এ সম্পর্কে জানান, ভারত সরকার অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আমরা সেখানে যেতে চাই। আমরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারি প্রতারণার শিকার না হই এটাই সরকারের কাছে দাবী।

একই এলাকার হামিদা (৩৫) জানান, হামরা ইন্ডিয়া যাবার চাই। হামাক ভয় দেকায় কিছু দিবার নয়। কোন জাগাত নিয়া যাইবে, কোটে থুবে না থুবে ঠিক নাই। হামরা অত ভয় পাই না, হামরা ইন্ডিয়া যামোই।’ একই কথা জানালেন যারা এখান থেকে ভারতে যেতে নাম লিখিয়েছেন।

অপরদিকে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় অবস্থিত ১০ টি ছিটমহলের মধ্যে ৩৪ টি পরিবার ভারতে যেতে আগ্রহী হয়েছে। এখানকার কালামাটি ছিটের আরজিনা (২৫) জানান, আমার ১ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্বামীসহ ভারতে যেতে চাই। ভারত সরকার পাকাবাড়ীসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এছাড়াও সেখানে ছেলে-মেয়েকে ভালভাবে লেখাপড়া করাতে পারবো।

একই গ্রামের আলতাফ (৩২) জানান, আমার কোনো সম্পদ নাই। এর আগেও রাতের আঁধারে কাটাতার ডিঙিয়ে ভারতে গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেছি। আমি আশা করছি ভারতে গেলে ভালভাবে চলতে পারবো। সেটা বিরাট দেশ। কোনো না কোনো জায়গায় কাজ জুটে যাবে।

ছিটমহলের বিভিন্ন বয়সী মানুষ ও এর সাথে সম্পৃক্ত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। এর মধ্যে ৪টি বিষয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ছিটে জমিজমা ও পারিবারিকভাবে বিরোধ। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার কারণ। তৃতীয়ত, মাতৃভূমির প্রতি যে টান থাকা দরকার সেটি কমে গেছে বিভিন্নভাবে ভারতে গিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করতে গিয়ে। চতুর্থত, ভারতীয় সরকারের বিভিন্ন লোভনীয় প্যাকেজ।

কালিরহাট ছিটের বেশ কয়েকজন জানালেন, বাহে ছিটে জমিজমা নিয়ে মামলায় খুন খারাপি পর্যন্ত হয়ে গেছে। প্রভাবশালীদের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকই মাটির মায়া ত্যাগ করেছে। আর যারা চোরাচালানি করে সংসার নির্বাহ করেছে তারা মন্দা ব্যবসার চিন্তায় চলে যাচ্ছে।

এই ছিটের আমিনুল (২৬) জানান, আমাদের এখানে প্রতিদিন ভারতীয় পত্র-পত্রিকা এনে নেতারা ভারত সরকার কি কি সুযোগ সুবিধা দিবে তা পড়ে পড়ে শোনায়। এতেও অনেকে আকৃষ্ট হয়েছে। আমরা ভারতীয় উত্তরবঙ্গ ও বর্তমানসহ প্রতিদিন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ভারত সরকার প্রতিজন ছিটবাসীকে ফ্লাটবাড়ি, নগদ ৫ লাখ টাকা, ৫ বছরে যাতায়াতের জন্য ট্রাভেলস ডকুমেন্ট দেবে। এছাড়া ২ বছরের শুকনো খাবার, গবাদিপশুর খাবারসহ রেশন কার্ড ইত্যাদি সরবরাহ করবে।
           
ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গোলাম মোস্তফা জানান, ছিটমহলবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেশন কার্ড, ফ্ল্যাট বাড়ি আর কর্মসংস্থানসহ ভারত সরকারের দেয়া নানা সুযোগ সুবিধা সত্ত্বেও ভারতীয় ছিটমহলের বেশির ভাগ মানুষ শেষ পর্যন্ত নাড়ির টানেই বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাছাড়া ভারতে গিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আত্মীয়তার বন্ধন বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মধ্যে ভারত যাচ্ছেন মাত্র ৩১৭ জন মানুষ।  অথচ জনগণনা শুরুর আগে ধারণা করা হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ ভারতে যেতে পারেন।

 তিনি আরো জানান, অন্তত দেড় হাজার মানুষ ভারতে যাবার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৭৭৯জন মানুষ ভারত যাচ্ছে। এদের মধ্যে ১৬৩ জন মুসলিম এবং বাকিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। লোভনীয় সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে মাতৃভূমিতে থাকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন তারা।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের সভাপতি মইনুল হক জানান, গত ৬ই জুলাই থেকে ১৬ই জুলাই পর্যন্ত দুই দেশের যুগ্ম পর্যবেক্ষক দল ৭৫ টি দলে বিভক্ত হয়ে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। ভারত পুনর্বাসনের জন্য কোচবিহারে আন্তর্জাতিক মানের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাকাপাকি  পুনর্বাসনের জন্য মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা ও হলদিবাড়িতে চারতলা আবাসন গড়বে। প্রতিটি পরিবার ৮শ থেকে ৯শ’ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট পাবেন বলে জানা গেছে।

নাজমুল হোসেন/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।