আবারো দেশ সেরা হলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক
আবারো দেশ সেরা জেলা প্রশাসক হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অসামান্য অবদানের জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দেশ সেরা জেলা প্রশাসকের পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এর আগে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ E-Governance ক্যাটাগরিতে দেশসেরা জেলা প্রশাসক মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর সৈয়দ বেলাল হোসেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর কুষ্টিয়াকে দুর্ণীতিমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। `ঘুষ-দুর্নীতিকে না বলুন` এই স্লোগানকে ধারণ করে নিজ দফতর থেকে শুরু করে ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, বিআরটিএ অফিস, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে একের পর এক শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন।
কঠোর নজরদারি আর ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব দফতরের ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়ম দুর করে খুব অল্প দিনের মধ্যেই জনগণের বিপুল আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন। শুধু জনগণের আস্থা অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে সৈয়দ বেলাল হোসেন নিজ দফতরসহ সকল সরকারি দফতর সমূহকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলেন। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের জনবান্ধন প্রশাসন গড়ে তোলার এ কর্মসূচি কুষ্টিয়াবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
৬৭ টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলে গোটা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হন। এছাড়া ১৮ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮১৫ জনের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সক্ষম হন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমসহ জেলার ২৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম প্রদানের মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপন করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ড্যাশবোর্ডে নিবন্ধনকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হার ৯৬% যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলায় আইসিটি সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা-৩৫২টি, সক্রিয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সংখ্যা-৩২৬টি, শিক্ষা কর্মকর্তাগণ ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন সংখ্যা-৪১৪টি এবং জেলায় In-house প্রশিক্ষণ আয়োজনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা-৬৪টি।
জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ২৮০টি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ২৮০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষককে নিয়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় দিনব্যাপী বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ইতোমধ্যে ৬টি উপজেলার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমূহকে নিয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ড্যাশবোর্ডের উপর একদিনের কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় ই-সেবা সার্ভিস (NESS) ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ৩৩,৭১৮টি আবেদন গৃহীত হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪,৮৩১টি। পত্রজারী করা হয়েছে ৩৪,৬৮৭টি, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সাল এর জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ১৭,৮৫৫টি ডাকগ্রহণ করা হয়েছে, মোট কার্যক্রম ৫৮,৭৯৮টি এবং মোট পত্রজারী ২৫,৩১২টি যা সারা দেশে সর্বোচ্চ। গত ১০ জুন এটুআই কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলার ৭৪ টি ওয়েব পোর্টালের মধ্যে ৪৬টি অসম্পন্নতার হার ০%, ২৭টির অসম্পন্নতার হার ১-৪% এবং ১টির অসম্পন্নতার হার ৫-৬% ।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কুমারখালী উপজেলায় সোশ্যাল মিডিয়া আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং ইস্যু বেইজেড (বিষয় ভিত্তিক) সোশ্যাল মিডিয়া আড্ডা আয়োজনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা থেকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০১৪ সনে বেসিস কর্তৃক ১০ জন অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হয়েছেন। জেলা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সার টু অন্ট্রাপ্রনর শীর্ষক মোট ১৯৮ জনকে প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইন আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সার তৈরি উপলক্ষে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী Creating New Bangladesh (CNB) এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আল-মামুন সাগর/এমজেড/আরআইপি