বাস একটি, যাত্রী তিন হাজার
রাজধানী ঢাকায় দুই লাখ গাড়ি চলার কথা থাকলেও এই মুহূর্তে দশ লাখের ওপর যান চলাচল করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে। আর ঢাকার সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, একটি রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যে পরিমাণ রাস্তা থাকার কথা, ঢাকায় তা থেকে ১৯ ভাগ কম। অথচ সড়কের তুলনায় গাড়ি চলাচল করছে পাঁচ গুণ বেশি। আবার রাজধানীতে চলাচলকারী পরিবহনের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই বেশি। বিআরটিএ’র এক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রাজধানীতে ৩০ হাজার গণপরিবহন নিবন্ধিত যার মধ্যে বাস, দ্বিতল বাস ও মিনিবাস রয়েছে। নিবন্ধিত এসব পরিবহনের মধ্যে মাত্র চার হাজার চলাচল করছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এই মুহূর্তে রাজধানীতে প্রতি তিন হাজার নগরবাসীর জন্য মাত্র একটি করে গণপরিবহন রয়েছে। অথচ রাজধানীতে দশ লাখ পরিবহন চলাচল করছে, যার অধিকাংশই ব্যক্তিগত। ফিটনেসবিহীন গাড়ির ব্যাপারে সরকারের কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে বলেও জানে না বিআরটিএ। আবার রাজধানী ঢাকার আয়তন অনুসারে কি পরিমাণ গাড়ি চলবে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই বিআরটিএ’র কাছে। এ নিয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগও নেই আপাতত।
বিআরটিএ’র রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোনে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তথ্য দেয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
নগর পরিবহনের এই অব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক বিভাগও দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ফিটনেসবিহীন লাখো পরিবহনের কারণেই প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিবছর শত শত মানুষ দুর্ঘটনার কবলে প্রাণ দিচ্ছেন। পরিবহন খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই শহরের আয়তন এবং জনসংখ্যা অনুপাতে কি পরিমাণ পরিবহন চলবে তার একটি সমন্বিত পরিকল্পনা থাকার জরুরি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সে দাবি করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। সরকার চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে পরিবহনও। অথচ কোনো কিছুই সিস্টেমের মধ্যে চলছে না।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতিদিন রাজধানীতে ৩১৭টি গাড়ি নামছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেটকার। দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের ৭৫ শতাংশ চলছে রাজধানীতে। অথচ এসব পরিবহনে যাতায়াত করছে মাত্র ৮ ভাগ যাত্রী। বাকি ২৫ ভাগ যানবাহন ৯২ ভাগ যাত্রীকে বহন করছে। যানজটে প্রয়োজনীয় ট্রিপের এক তৃতীয়াংশ ট্রিপও পূরণ হচ্ছে না প্রতিদিন। নিত্যনৈমিত্তিক ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ব্যক্তিনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থার কারণে দেশে কোম্পানি নির্ভর পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না। পরিবহন খাতে পেশাদার লোক না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে গোটা দেশের পরিবহন ব্যবস্থা। তিনি বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। গণমানুষের সেবা নিয়ে রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে বলেও মনে হচ্ছে না। দিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে বিপাকে পড়ছে।
এএসএস/ওআর/এমএস