রমনা বটমূলে হামলা : ১৭ বছরেও বিচার হয়নি বিস্ফোরক মামলার
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ১৭ বছর পার হতে চলল। মামলার সাক্ষী না আসায় এখনও শেষ হয়নি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা এই মামলার বিচার।
মামলার ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য হয়েছে। অবশিষ্ট সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে আছে আলোচিত মামলাটি।
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। চার বছর আগে হত্যা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন, মামলার অধিকাংশ সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা দুটির সাক্ষী একই ছিল। এক সঙ্গে দুটি মামলার বিচার পরিচালিত না হওয়ায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার কার্য বিলম্বিত হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দুইটি মামলা হয়। দুই মামলারই আসামি ও সাক্ষী একই। হত্যা মামলার বিচার ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দুই মামলার বিচার একসঙ্গে পরিচালিত না হওয়ায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার বিলম্বিত হচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন,সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। কিন্তু সাক্ষীদের উল্লেুখত ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘নির্ধারিত প্রতি তারিখে সাক্ষীদের হাজির না করায় মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা চাই মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ হোক। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে ন্যায়-অন্যায়ের।’
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৪০৮ সনের ১ বৈশাখ) ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। ওই ঘটনার পর রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন।
২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইন দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। তাদের ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। তাদের ৩০২/৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন তারা হলেন- মাওলানা আকবর হোসেন, আব্দুল হান্নান, আরিফ হোসেন, শাহাদাত হোসেন, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া, আবু বকর ও আবু তাহের।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি গত বছর ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
অন্যদিকে মাওলানা তাজউদ্দিন, শকিকুর রহমান, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর আলম বদর এখনও পলাতক।
জেএ/এমএমজেড/আরআইপি