নববর্ষের আনন্দ নেই হকারদের মনে!
‘গরমে ঘাম মুছতে গামছা নেন। সিরাজগঞ্জের তাঁতে বোনা মানে ভালো, অাড়াই হাত বহরের ভালো মানের গামছা। দামেও সস্তা। মাত্র ৩০ টাকা।’
শাহবাগ চৌরাস্তার সামনে আজ (শনিবার) সকাল ১০টায় ‘এসো হে বৈশাখ’ লেখা গামছা হাতে নিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন দুই যুবক। সম্পর্কে তারা সহোদর, নাম হারুনুর রশীদ ও তালহা।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার পাছখিরা গ্রামের এ দুই সহোদর গ্রামের পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছেন নববর্ষের প্রথম দিন ঢাকায় গামছা ভালো বেচাকেনা হয়, তাই নিজেদের তাতে বোনা এক হাজার পিস গামছা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন।
ভোরে গাবতলীতে নেমে লোকাল বাসে চেপে শাহবাগে এসেছেন। সকাল থেকে তিন ঘণ্টায় মাত্র তিনটা গামছা বিক্রি হয়েছে বলে দুই ভাইয়ের মন খারাপ।
শুধু গামছা ব্যবসায়ী এ দুই সহোদরই নন, তাদের মতো বিভিন্ন পণ্যের হকার কারও মনে আনন্দ নেই। নিরাপত্তাজনিত কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাকডাকা ভোর থেকে হকারদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা উদ্যান থেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কেউ কেউ লুকিয়ে-ছাপিয়ে এসব স্থানে অবস্থান নিলেও পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়ের ওপর থাকাতে বেচাকেনা হচ্ছিল না।
শাহবাগ বারডেম হাসপাতালের সামনে বেলী ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাভারের এক যুবক। আজ দিনভর- সকালে ফুল, দুপুরে লাচ্ছি ও দুপুরের পর বিরিয়ানি বিক্রি করবেন বলে আশা করে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁড়িয়ে বেড়ানোর ফলে সকাল থেকে মাত্র ১০ টাকা করে পাঁচটি ফুল বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন।
ওই যুবক জানান, কারখানা থেকে বরফ কিনে রেখেছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর জাতীয় জাদুঘরের সামনে লাচ্ছি বিক্রি করবেন বলে মনোস্থির করেছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে আদৌ ব্যবসায় মূলধন উঠবে কিনা তা ভেবে শঙ্কিত হচ্ছেন।
কাঁটাবন মোড়ে ভ্যানভর্তি ডাব নিয়ে বসেছিলেন শাহবাগের ভ্যানচালক শাহ আলম। গতরাতে ওয়াইজঘাট থেকে ৮ হাজার টাকায় ২শ’ ডাব কিনে আনেন। খুব ভোরে শাহবাগে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়।
শাহ আলম জানান, ডাব কেনাতেও ঠকেছেন। যে ডাব ৩০ টাকায় আগে কিনেছেন গতকাল তা ৪০ টাকায় কিনতে হয়েছে। প্রতি পিস ৬০ টাকা দরে বিক্রি করবেন বলে ভেবেছিলেন। শাহবাগে যেতে না পারলে ডাব বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর তারা হকারদের কিছুটা ছাড় দেয়া হবে।
এমইউ/বিএ/আরআইপি