মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে স্কুলছাত্রী শান্তা আজ ডুগডুগি বিক্রেতা
‘স্যার, একটা ডুগডুগি নেন না। খুব ভালো বাজে। মাত্র ২০ টাকা, একটা নেন স্যার।’ ছোট্ট হাতে দ্রুত কব্জি ঘুরিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে এভাবেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটা ডুগডুগি বিক্রি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল আনুমানিক নয়-দশ বছরের এক শিশু। সকাল ৮টায় রাজধানীর শাহবাগ বারডেম হাসপাতালের সামনে এ দৃশ্যে দেখা যায়।
ছোট্ট শিশুটির সামনে একটি বস্তাভর্তি ডুগডুগি। মাথায় ‘হে বৈশাখ’ লেখা হলুদ গামছা বেঁধে এ শিশুটির ডুগডুগি বিক্রির সময় কোনো ধরনের জড়তা ছাড়া শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলছিল। তার পাশ দিয়ে বৈশাখী পোশাক লাল ও সাদা জামা পরে অন্য শিশুদের বাবা-মা-ভাইবোন ও স্বজনদের হাত ধরে যেতে দেখে আড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল সে।
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক সামনে এগিয়ে গিয়ে শিশুটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। শিশুটির নাম শান্তা। বাসা কমলাপুর সংলগ্ন মানিকনগরে। বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক ‘ক্লিনার’ এর চাকরি আর মা ফুলেজা বেগম বাসাবাড়িতে ছোটা কাজ করেন।
আলাপকালে জানা যায়, শান্তা মানিকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। রোল ১১। শান্তা জানায়, সে নিয়মিত স্কুলে যায়। কিন্ত আজ সে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ডুগডুগি বিক্রি করতে এসেছে। ডুগডুগিগুলো তার মা নিজেই বানিয়েছে।
শান্তা জানায়, দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসার চালাতে বাবা-মা অনেক কষ্ট করে। আজ ভালো বেচাকেনা হলে মায়ের মুখে হাসি ফুটবে। এ কারণে সে সারাদিন অনেক ডুগডুগি বিক্রির চেষ্টা করবে।
শান্তার সঙ্গে কথা বলার সময় তার মা ফুলেজা বেগম উপস্থিত হয়ে তার মেয়ে কোনো অপরাধ করেছে কিনা জানতে চান। ফুলেজা বেগম বলেন, ‘স্যার মাইয়াডা আমার খুব বুদ্ধিমতি। স্কুলের স্যাররা আদর করে। আজ জোর কইরা আমার লগে আইছে। মাইয়া আমারে খুশি করতে সারাদিন ডুগডুগি বেচবো।’ এ কথা বলে কষ্টের হাসি হাসেন ফুলেজা বেগম।
এমইউ/বিএ/আরআইপি