কোটা নিয়ে কাজ করবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল, তবে যদি কোটার প্রয়োজন হয়- সে ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই, যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনো কোটা পদ্ধতিরই দরকার নেই। কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি (কোটা রাখার) দরকার হয় ক্যাবিনেট সেক্রেটারি তো আছেই। তাকে তো আমি বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি বসে কাজ করবে। সেখান থেকে তারা দেখবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বুধবার রাতে জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, কিন্তু এখনও ফরমালি গঠন (কমিটি) করা হয়নি।’
কমিটিতে আর কে কে থাকছেন ও কার্যপরিধি কী হবে- জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, ‘ফরমেশনটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ক্যাবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে হবে, এটা বলা হয়েছে। কারা কারা থাকবে- না থাকবে, কী হবে, না হবে- সেসব বিষয় ঠিক হতে একটু সময় লাগবে।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এ ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত রোববার কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়। রোববার রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতর তছনছ এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসে। বৈঠকে কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে- এ আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা মঙ্গল ও বুধবারও আন্দোলন চালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এ অবস্থায় বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বলেন। সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’
এদিকে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর ‘আমরা পুরো কোটা বাতিল চাইনি, সংস্কার চেয়েছিলাম’ এমন মন্তব্য করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাব।’
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত। রাতে কমিটি বসে বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে এসে সিন্ধান্ত জানানো হবে।’
তিনি এ সময় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল সকাল ১০টায় এখানে সমবেত হব। সবাই আসবেন। সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
আরএমএম/জেডএ/এমএআর/এমএস