ডিজিটাল অ্যাক্ট সাংবাদিকদের জন্য কষ্টের কিনা দেখা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪০ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮
ফাইল ছবি

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বহুল আলোচিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট গতকাল (৯ এপ্রিল) সংসদে উঠেছে। কণ্ঠভোটে সেটি পাশ হয়ে গেছে। এখন সেটি পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে এবং সেখানে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে তা সাংবাদিকদের জন্যে কষ্টের কি না।

এই আইনিটির খসড়া যখন মন্ত্রীপরিষদে যায় তখন থেকেই অনেক সমালোচনা ছিল। এর আগে আপনি (আইনমন্ত্রী) বলেছিলেন- সবার সঙ্গে কথা বলে আইনটি ঠিক করা হবে। কিন্তু এরইমধ্যে গতকাল সেটি প্রাথমিকভাবে পাশ হয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বলা হলো না, এটা সাংবাদিকদের জন্যে কষ্টের কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা বলি? আইনটা পাশ হয়নি। আপনাদের আইন পাশের সিস্টেমটা একটু বলি। প্রথমে যে মন্ত্রণালয়ের আইন সে মন্ত্রণালয় আইনের একটা ড্রাফ্ট করে। ড্রাফ্টের পরে খসড়া অনুমোদনের জন্য সেটা মন্ত্রীপরিষদ সভায় উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রীপরিষদ যদি নীতিগত অনুমোদন দেন তখন সেটি ভেটিংয়ের জন্য যায়। ভেটিং হয়ে গেলে আবার সেটি মন্ত্রীপরিষদে যায়, তখন সেখানে এটার অনুমোদন হয়। অনুমোদন হওয়ার পরে সেটি সংসদে যায়। পার্লোমেন্টে যাওয়ার পরে প্রথমে, যেটা গতকাল (০৯ এপ্রিল) হয়েছে, সেটা হচ্ছে এটাকে হাউসে উত্থাপন করা হয়েছে। এই হাউসে উত্থাপন করার পরে এটা সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু তাও বলা হয়েছে এটা এখন পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমি ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের একটা অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, সেখানে আলাপ-আলোচনাকালে ৩২ ধারার এটা উপধারা সংযোজন করার ব্যপারে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। গতকাল বিরোধীদলীয় মাননীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম সাহেব সেটার উল্লেখ করেছেন। আমি আপনাদের বলতে চাই যখন এটা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে তখনও কিন্তু আলাপ আলোচনা করার সময় থাকবে এবং আলাপ-আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনা হয়ে এই যে উপধারার কথা বলা হয়েছে, সেটা যদি প্রয়োজন মনে হয় এবং সেটা করলে যদি এমন দাঁড়ায় যে, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অব স্পিচ ব্যহত হবে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, ব্যহত হবে না এমন জিনিস যদি পরিস্কার করা হবে বলে মনে হয় তাহলে নিশ্চই সেটা সংযোজন করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, কিন্তু যে কথাটা বলা হচ্ছে এখন সেটা কারো সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে সংসদে উত্থাপন করা হয়ছে সে কথাটা ঠিক না।

তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার জায়গাই হচ্ছে স্টেন্ডিং কমিটি। স্টেন্ডিং কমিটিতেও আলাপ-আলোচনা করা যায়। যে পর‌্যয়ে আমি বলেছিলাম সেখানে আলাপ-আলোচনার জয়গা স্টেন্ডিং কমিটি ছাড়া অন্য জায়গা ছিল না। তাই বিলটা উত্থাপন করে কারো সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে উত্থাপন করা হয়েছে, কথাটা ঠিক না। বরং উত্থাপন করে আলাপ-আলোচনার দ্বার উন্মোচন করা হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোথায় যুক্ত করে দেব, কখন যুক্ত করে দেব সেটা কিন্তু বলিনি। সময়ে যে জায়গায় যুক্ত করা দরকার ঠিক সেখানেই যুক্ত করা হবে। তাহলে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য তাহলে উদ্বেগের কোনো কারণ আছে কি না?

আমি তো বলেছি আপনাদের কোনো রকম উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিৎ না। আমি আরও বিষদভাবে আপনাদের বলব এক সময়, কেন উচিৎ না।

আলোচনা কি সংসদীয় কমিটিই করবে? এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, অলোচনা সংসদীয় কমিটিই করবে। এবং সেখানে যে কথাটা আজকে আপনাদের সামনে বলছি, যে কথা আমি ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে বলেছি, ঠিক সে কথাটাই আমি সেখানে বলব। ২০১৬-১৭ সালে আপনি বলেছিলেন সাইবার ক্রাইমন ট্রাইব্যুনালের এজলাসসহ যেসব অপর‌্যাপ্ততা রয়েছে সে সম্পর্কে বলেছিলেন শিগগিরই উদ্যেগ নেয়া হবে।

সাইবাইর আইন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, তখন কিন্তু ৫৭ ধারা নিয়ে একটা বাক-বিতণ্ডা চলছিল। তখনই কিন্তু বলেছিলাম এটা নিয়ে একটি নতুন আইন আসছে। এই নতুন আইনটা ফাইনালাইজ হোক, সাইবার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল চলছে, অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আমার বিশ্বাস এটাকে আরও ইনফ্রাস্ট্রাকচারালি (অবকাঠামোগত) এবং প্রাকটিক্যালি এটাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য যা করা দরকার আমরা করব।

এর আগে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারকদের মনে রাখতে হবে যে, ‘মানুষ নিরুপায় না হলে আদালতের দ্বারস্থ হয় না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই কেবল মানুষ বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালতই বিচারপ্রার্থী জনগণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কাজেই বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার লাভ করতে পারে সেদিকে বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধান ও আইন অনুযায়ী প্রত্যেক বিচারকই স্বাধীন। তবে বিচার করতে গিয়ে কোনো পক্ষ যাতে অবিচারের শিকার না হয় এবং কোনোভাবে যেন অহেতুক হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিচারকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।