এবার রাজপথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মুহা. মনির-উজ-জামান
মুহা. মনির-উজ-জামান মুহা. মনির-উজ-জামান , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮
কোটা সংস্কারের দাবিতে কুড়িল বিশ্ব রোডে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধ।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশিপাশি এবার যোগ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

বেশ কয়েক মাস ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। এ দাবিতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, রাস্তা অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। প্রথমদিকে এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার নমনীয় থাকলেও এখন শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

mov5

এ কারণে গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় আন্দোলনকারীদের হটাতে তাদের ওপর লাঠিচার্জসহ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে প্রায় দেড় শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। রাবার বুলেটের আঘাতে কয়েকজন রক্তাক্ত হন। আহতদের মধ্যে দুজনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। বাকিরা পুলিশি ঝামেলা এড়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।

দাবি আদায়ে সোমবারও ঢাবি এলাকায় আন্দোলনকারীরা ছিলেন প্রতিবাদমুখর। পুলিশের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

cota-private-2

কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচে আটকা পড়েছে বহু যানবাহন

ঢাবি এলাকায় শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। রোববার রাতে ও সোমবার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তাদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থী শিক্ষিত বেকার যুবকরাও যোগ দেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বৈঠকে ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিলে এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।

mov5

বৈঠক শেষে সচিবালয় থেকে পরিষদের ১৯ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে সাধারণ আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। তখন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ‘আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত ভুয়া, মানি না, মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।

এ সময় পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাব। এক মাসে প্রধানমন্ত্রী দুবার দেশের বাইরে থাকবেন, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে থেকে ফের আন্দোলনে যাব।’

cota-private-2

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ও রোজা। এ পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মুলো ঝুলিয়েছে সরকার। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। অন্তত কোটা সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

এরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, সব হলের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। রোকেয়া হলের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের থামাতে চেয়েছিল সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে মলচত্বরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি এখনও থমথমে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ বাধতে পারে- এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

mov5

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড বসুন্ধরা গেট, নর্দা-প্রগতি সরণির রাস্তা অবরোধ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

একই দাবিতে রামপুরায় আন্দোলন করছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধের কারণে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।