সিআইডির রাসায়নিক প্রতিবেদনে এখন বিলম্ব হচ্ছে না


প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

সিআইডি পুলিশের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে মূলতবি প্রতিবেদনের সংখ্যা এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৩ হাজারেরও বেশি নমুনার আলামত রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হলেও একটি প্রতিবেদনও মুলতবি ছিল না।

সিআইডি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, মাত্র বছর ছয়-সাতেক আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সময়মতো আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল না করার বিস্তর অভিযোগ ও দুর্নাম ছিল। ২০১০ সালে ল্যাবরেটরিতে মাত্র ৪ হাজার ৪শ’ ১১টি আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ওই বছর মুলতবি প্রতিবেদনের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৯৯৫টি।

তারা জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে ল্যাবরেটরিতে মামলা ও আলামতের সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে পাঁচ হাজারের বেশি সংখ্যক মামলার মোট ১৫ হাজার ৬শ’ আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এ সময় পর্যন্ত ১৩টি মামলার মাত্র ২৮টি প্রতিবেদন মুলতবি ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিআইডি পুলিশের অধীনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি রাসায়নিক ল্যাবরেটরি পরিচালিত হচ্ছে। ল্যাবরেটরি দুটিতে খুন, ধর্ষণ, এসিড অপরাধ ও মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের মামলার নমুনা-মানুষের ভিসেরা, মাদক, এসিড, বীর্য, রক্ত, পশুপাখি, মাছ ও পাখি ও স্টমাকওয়াশ ইত্যাদির রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, সীমিত জনবল নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি ল্যাবরেটরির কার্যক্রমই সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ল্যাবরেটরিতে মঞ্জুরিকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোট পদের সংখ্যা ৬৫টি হলেও বর্তমানে ২৭টিই শূন্য। তন্মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার ১৮টি থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪ জন।

প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদটি ২০০৯ সাল থেকে শূন্য পড়ে আছে। রাসায়নিক পরীক্ষকের ৬টি পদের সবগুলোই শূন্য। সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের ৮টি পদের বিপরীতে মাত্র ২ জন রয়েছেন। উপ-সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের ১টি পদেও কর্মকর্তা নেই।

এছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির ২৩ পদের ৩টি ও চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদের ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। সীমিত জনবল নিয়েও কিভাবে ল্যাবরেটরিটি মূলতবি প্রতিবেদনের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ল্যাবরেটরিটির উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দিলীপ কুমার সাহা জানান, প্রয়োজনীয় জনবলের স্বল্পতা থাকলেও ল্যাবরেটরিতে কর্মরত সকলের আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও সিআইডি পুলিশের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঠিক দিক নিদের্শনার কারণে মুলতবি প্রতিবেদনের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে এ ল্যাবরেটরিতে আধুনিক ও উন্নতমানের বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি-গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি (জিসি), গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি ম্যাস স্পেট্রোসকপি (জিসিএমএস), হাই পারফরমেন্স লিকুইড ক্রমোটোগ্রাফি (এইচপিএলসি), ফোওরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড স্পেকট্রোসকপি (এফটিআইএস) এর মাধ্যমে আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কতোদিনের মধ্যে তারা রাসায়নিক পরীক্ষার আলামত প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন জানতে চাইলে দিলীপ কুমার সাহা বলেন, অধিকাংশ প্রতিবেদন এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে দেয়া হয়। তবে স্পর্শকাতর ও জটিল মামলার আলামতের প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে থাকে বলে তিনি স্বীকার করেন।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, খুন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলার সুষ্ঠু পুলিশি তদন্তের জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন খুবই গুরত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বর্তমানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন পেতে সময় বেশি লাগছে।

একনজরে রাসায়নিক পরীক্ষার আলামতের পরিসংখ্যান :

 
এমইউ/এসএইচ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।