ভিসির অভিজাত প্রাসাদ, নিমিষেই খানখান

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৮
মাহবুব আলম

তখনও বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হয়নি। দোতলায় দুটি কক্ষে বাতি জ্বলছে। সে বাতির আলো ফিনকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভাঙা কাচের জানালা দিয়ে যতটুকু আলো বাইরে আসছে, তা আসবাব পোড়ানো আগুনের শিখায় ফিকে হয়ে আসছে বটে।

jagonews24

বাইরে লেলিহান আগুন। সোফা আর কাঠ পোড়ানো আগুনের শিখা আকাশপানে। ভেতরে তাণ্ডব। বাড়ির পেছনে ততক্ষণে দুটি প্রাইভেটকারও পুড়ে ছাই। যেন এক টুকরো নরকের রূপ। কে বলবে, রাত ১২ টার আগেও সব সাজানো, গোছানো ছিল! অথচ রাত ১টা বাজার আগেই সব শেষ।

jagonews24

সবাব আর গাড়ি পোড়ানো আগুনের তেজ তখন কমে এসেছে। দগদগ করছে আগুনের কুণ্ড। ততক্ষণে বিদ্যুতের লাইনও বিচ্ছিন্ন হলো। ঘোর আঁধার। পুরানো গাছগুলো আঁধারকে আরও ঘনীভূত করেছে। আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদ উঁকি দিয়ে আবারও মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে।

jagonews24

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাড়িতে তখন শুধু ধংসলীলার চিহ্ন। বিষাদের রেখা সবার ললাটে। এভাবে কেউ ধংস চালাতে পারে, এটিই যেন সবার প্রশ্ন! নীচতলা থেকে উপরতলা। এক চিলতে জায়গাও বাকি নেই যেখানে হিংসের থাবা পড়েনি। চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশেও এমন তাণ্ডব হয় না। গেস্ট রুম থেকে বেডরুম। রান্না ঘর থেকে বাথরুম। সর্বত্রই ভাঙ্গার খেলা। ফ্রিজ, টেলিভিশন, চেয়ার, টেবিল, আলমারি থেকে শুরু করে ছোট্ট একটি খেলনাও বাদ যায়নি।

jagonews24

প্রথমে নীরব দর্শক ছিলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। পরে সপরিবারে বাড়ির কোনো এক আঙ্গিনায় লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। ধংসের পর আর ঘরে ঢুকতে পারেননি তিনি। বাইরে একটি চেয়ারে প্রায় নির্বাক হয়ে বসে আছেন শেষ রাতেও।

jagonews24

জাগো নিউজের কাছে ঘটনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অনেক আন্দোলন দেখেছি। কিন্তু এমন তাণ্ডব দেখিনি। হত্যার পরিকল্পনাই ছিল হয়ত। নইলে বেডরুমে ঘুমন্ত মানুষগুলোর ওপরে এভাবে হামলা হতে পারে না। ওরা কিছুই আর অবশিষ্ট রাখেনি। ঘরে পা রাখারও উপায় নেই। সর্বোচ্চ ক্ষতিই করে ছিল। অথচ কোটা সংস্কার সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ার। আমরা এখানে কিই-বা করতে পারি। তিনি বলেন, এই ঘটনার দুঃখ জানানোর ভাষা নেই। কারা করেছে, কি উদ্দেশ্যে করলো সরকার অবিলম্বে তার ব্যবস্থা নিক।

jagonews24

ভিসি ভবনেই প্রায় ৩৪ বছর ধরে পিয়নের চাকরি করছেন ইলিয়াস। মুহূর্তের তাণ্ডবে তিনি বাকরুদ্ধ। কথা সরছিল না। ধীর কণ্ঠে বলেন, দশ মিনিটেই শেষ করে দিয়ে গেল। কত মূল্যবান জিনিস। ভাঙল উল্লাস করে করে। এমন হামলার ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। বাইরের লোকও এসেছিল।

এএসএস/ওআর/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।