স্বামী আবিদের পাশেই চিরঘুমে টপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৮

নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের পাশের কবরেই শায়িত হলেন স্ত্রী আফসানা খানম টপি। রাজধানীর উত্তরার-১৩ সেক্টরে গাউছুল আজম জামে মসজিদে শুক্রবার বাদ আছর জানাজা শেষে সন্ধ্যায় বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আফসানা খানম টপির দুলাভাই এবিএম ইমতিয়াজ উদ্দিন জানান, আবিদ সুলতানের আকস্মিক চিরবিদায়ে আমরা শকট ছিলাম। বেশি ভেঙে পড়েছিল টপি। স্বামীর শোকে দুই দফা স্ট্রোক করে। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পাঁচ দিন পর শুক্রবার সকালে টপির মৃত্যুর সংবাদ জানায় চিকিৎসকরা।

তিনি বলেন, আবিদের পর টপিও চলে যাবে ভাবিনি। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে ছেলে তানজিব বিন সুলতান মাহি। কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না। বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইছে। সবাই এখন ওকে নিয়েই চিন্তিত।

গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবরের কয়েক দিনের মাথায় স্ট্রোক করেন টপি। স্বামী হারানোর শোক আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি তার।

অসুস্থ হওয়ার আগে টপি বলেছিলেন, যা হারিয়েছি তা অপূরণীয়। কোনো কিছুতে তা আর পূরণ হওয়ার নয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্বামীর পথ ধরে চলে যান না ফেরার দেশে।

পরিবারিক সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে অফিসিয়ালি ডিক্লারেশন পাওয়ার পর টপির মরদেহ উত্তরার বাসায় নেয়া হয়।

শুক্রবার সকালে টপির মৃত্যুর পর দাফনের বিষয়ে কথা হয় ফুফাতো ভাই শাহিনুল ইসলাম শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বনানী সামরিক কবরস্থানে আবিদের কবরের পাশে দাফন করা হবে টপিকে। পরে একই কথা জানান আবিদের ছোট ভাই ডা. খুরশিদ মাহমুদও।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী একরাম হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান টপি। তার চিকিৎসায় যা যা করার দরকার ছিল সবই করা হয়েছে।

গত ১২ মার্চ দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলার বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের এস২-এজিইউ বিমানে ৭১ জন আরোহী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা করেন পাইলট আবিদ। বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।

ঠিক কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইউএস-বাংলার দাবি পাইলট আবিদের কোনো দোষ ছিল না। বরং ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম (এটিসি) থেকে পাইলট আবিদকে বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশনা দেয়া হয়।

দুর্ঘটনার পর ইউএস বাংলার কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের যে অডিও বের হয়েছে, সেখানে কন্ট্রোল টাওয়ারের কিছু মিস গাইডেন্স দেখেছি আমরা। তদন্তের পর সঠিক কারণ পুরোপুরি বলতে পারবো। প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পেরেছি ক্যাপ্টেনের এখানে কোনও দোষ নেই। কারণ, ৭০০ ঘণ্টারও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা এবং এ এয়ারপোর্টে শতাধিক ল্যান্ডিং এর নজির আছে তার।

জেইউ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।