আইসিইউতে সংকটাপন্ন টপি, বাইরে স্বজনদের শুধুই স্মৃতিচারণ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৮

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এর প্রবেশ দ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক নারী। কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে তিনি বার বার আইসিইউ’র ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে বলছিলেন, ‘টপিকে একটি বার সুযোগ দেন।’ নিরাপত্তাকর্মীরা অপারগতা জানালে ওই নারী বেঁকে বসে বলেন, ‘ওকে না দেখে এখান থেকে কিছুতেই সরবো না।’

শিউলি নামের ওই নারী ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত তিন দিন যাবত আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম টপির বান্ধবী। থাকেন চট্টগ্রামে। আবিদের মৃত্যু সংবাদ শুনে গত শনিবার ঢাকায় ছুটে আসেন। বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিতে এসে মৃত্যু শয্যায় দেখতে হবে তা ঘুনাক্ষরে ভাবেননি তিনি।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিউলি বলেন, গত ১৮ বছর যাবৎ তাদের পারিবারিক সম্পর্ক। এক সময় টপি স্বামী-সন্তানসহ চট্টগ্রামে থাকতেন। ওই সময় তার এবং টপির ছেলে একই স্কুলে পড়তো। বয়সে ছোট হলেও তাদের (টপি ও শিউলি) মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে যায়।

নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট আবিদের নিহত হওয়ার পাঁচ ছয়দিন আগেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে দুদিন টপির বাসায় কাটিয়েছেন। টানা দুদিন গত ১৮ বছরের সুখ-দুঃখের কতশত স্মৃতিচারণ করেছেন। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই বান্ধবীর স্বামীর মৃত্যু ও বান্ধবীকে আইসিইউতে দেখতে হবে তা কল্পনাও করেননি।

jagonews24

শিউলি জানান, স্বামীর মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না টপি। মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে নিদ্রাহীন সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। মানসিক আঘাত থেকেই তার ব্রেন স্ট্রোক হয়।

আবিদ তাকে (শিউলি) ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন। একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে খুব সুখী জীবন কাটাচ্ছিলেন টপি। কিন্তু সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।

বান্ধবীর সঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মোবাইল ফোনে তোলা দেশের বিভিন্ন পর্য়টন এলাকা ও অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের ছবি দেখিয়ে বলছিলেন, ‘এভাবে আর কোনোদিন ছবি তোলা হবে না। আল্লাহ তুমি টপিকে সুস্থ করে দাও।’

পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন জেরিন সুলতানা নামের আরেক নারী। তিনি জানান, উত্তরাতে তিন বছর এক বাড়িতে কাটিয়েছেন তারা। টপি ও আবিদের মতো ভালো মানুষ হয় না।

ইমতিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে মিডিয়াকর্মীরা ঘিরে ধরলে তিনি জানান, আবিদ তার ছোট ভাই। গতরাতেই রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনিও আইসিইউ’র বাইরে দাঁড়িয়ে টপির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি-না জানতে চাইছিলেন।

এমইউ/এমবিআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।