ঢামেকের সব রোগীই ‘স্ট্যাবল’, সোমবার ফিরছে মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪২ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৮

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ আগামীকাল সোমবার দেশে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

রোববার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে এবং সেখানে চিকিৎসা চলছে। আমরা এ মুহূর্তে জানতে পেরেছি, শাহীন বেপারি নামের আহত একজন ইতোমধ্যে ফ্লাই করেছেন, তিনি বিকেল নাগাদ ঢাকায় চলে আসবেন। বার্ন ইউনিটে অন্যান্য রোগীর মতো তাকে ভর্তি করা হবে। আগামীকাল কবির হোসেন নামে আরেকজন আসবেন। তিনি আজ আসতে পারেননি কারণ তাকে পুরোপুরি শুইয়ে আনতে হবে। কিন্তু আমাদের বিমান তাকে শুইয়ে আনতে প্রস্তুত নয়।’

তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে দুজন রোগী সিঙ্গাপুরে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ড. রেজওয়ান ও ইমরানা কবির। তারা দুজনই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন।’

‘আজ জেনেছি ইয়াকুব আলী নামে একজন রোগী আজ বিকেল ৪টায় একটি স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দিল্লীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হবে। অভিভাবকদের ইচ্ছাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।’

আবুল কালাম আজদ আরও বলেন, ‘আমাদের ফরেনসিক চিকিৎসক অধ্যাপক সোহেল নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গতকাল ৩২টি মরদেহ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি, ১৪ জন নেপালের অধিবাসী এক একজন চীনের। বাংলাদেশি ২৬টি মরদেহের মধ্যে আমরা ১৭ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকি নয়জনকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তারা ধারণা করছেন ওই নয়জনের মধ্যে তিন থেকে চারজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই। যে কয়জনের ডিএনএ টেস্ট লাগবে, তা করা হবে। আমাদের দূতাবাস থেকে নেপাল সরকার বরাবর একটি চিঠি তৈরি করা হচ্ছে। ওই চিঠি দেয়ার পর অনুমতি পেলে তাদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।’

‘আমরা জেনেছি যাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং আগামীকালের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে তাদের আগামীকালই বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ইউএস-বাংলা লাশগুলো বহনের চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের একবারে ১৫টির বেশি লাশ বহনের ক্ষমতা নেই। এজন্য তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে যাতে বিশেষ কোনো বিমানে তাদের আনা যায় কি-না’ বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, ‘নেপাল কর্তৃপক্ষ, আমাদের দূতাবাস সবাই মিলে এ বিষয়ে আলাপ করছে। তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কি-না, এটা আমরা বলতে পারছি না। সর্বশেষ যে তথ্য আমরা পেয়েছি সেটাই অবহিত করলাম।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি মেডিকেল টিম নেপালে কাজ করছে। এছাড়া আমরা এখানে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। অন্যান্য সংকটের মতো এটা আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করছি এবং করব।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মেডিকেল টিমের সবাই একে একে সব রোগীকে দেখেছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ চলছে। রোগীদের মধ্যে একমাত্র শেহরিনেরই অপারেশন করতে হবে। তার মেন্টাল কন্ডিশন আরেকটু স্ট্যাবল হলে আমরা সার্জারিতে যাব।’

‘অন্যরা কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্টেই (গতানুগতিক) ভালো হবেন বলে আমরা আশা করছি।’

সামন্ত লাল বলেন, ‘সব রোগীই স্ট্যাবল আছে, মেডিকেলের ভাষায় আমরা স্ট্যাবল বলি কিন্তু কাউকে শঙ্কামুক্ত বলি না। একটা রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে না যায় ততক্ষণ শঙ্কামুক্ত বলা যায় না।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আলম বলেন, ‘আমরা চারজন রোগীকে দেখেছি, তাৎক্ষণিক যা পেলাম তা হলো- তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, দুঃস্বপ্ন, ভয়ভীতি- এগুলো কাজ করছে। আমরা তাদের সাইকোলজিক্যাল ফ্রাস্টেড চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা হতে পারে। পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার হলে অনেক সময় মানুষের আত্মহত্যার চিন্তা আসে। এজন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদি কাউন্সিলিংয়ে রাখতে হবে। এজন্য আমরা তাদের বিস্তারিত ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখব।’

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি পাঁচ রোগীর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে অর্থোপেডিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শেহরিনের (৩০) ডান পায়ে তিনটি আঙ্গুল ভাঙা আছে। পিঠে স্কিন লস আছে। পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। মেহেদীর (২৯) হাঁটুতে আঘাত আছে কিন্তু হাড় ভাঙা নেই। আশা করছি দুই সপ্তাহ পর তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। স্বর্ণার (২২) তেমন কিছু নেই, তার তলপেটে সামান্য আঘাত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অ্যানির (২২) ডান গোড়ালিতে ব্যথা, কিন্ত হাড় ভাঙা নেই, লিগামেন্টে একটু সমস্যা হয়েছে। রুবায়েতের (৩২) সবই ভাল, বুকের ডানদিকের একটি হাড় ভাঙা।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান বলেন, ‘আহত যারা দেশে এসেছেন তারা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাচ্ছেন।’

গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস ২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর দুর্ঘটনায় পড়ে। বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ারের দেয়া ভুল অবতরণ বার্তার জেরে আকাশে অপেক্ষা করতে থাকে বিমানটি। পরে ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। তাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ।

আরএমএম/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।