চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন একুশে পদক পাওয়ায় নিসচার প্রীতি সম্মিলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ০৯ মার্চ ২০১৮

অনুষ্ঠান শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু তার আগেই হাজির শুভানুধ্যায়ীরা। সবার মনে আনন্দ, উচ্ছ্বাস। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তখনও আসেননি, কিন্তু তাতে কি? চলছে তাকে নিয়ে আলোচনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। রাজধানীর হোটেল ৭১ এ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’নিসচার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি সম্মিলন। উপলক্ষ এ বছর সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের একুশে পদক লাভ।

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ছয়টা ছোঁয়ার পাঁচ মিনিট আগেই এসে পৌঁছিলেন তিনি। একে একে আসছেন অভ্যাগত অতিথিরাও। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন তাঁকে। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তন। সিনেমা, সঙ্গীত, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় ঝলমলে হয়ে উঠে সম্মিলন স্থল।

নিসচার সূচনা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর অভ্যাগত অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয় ইলিয়াস কাঞ্চনের কর্ম ও জীবন। প্রজেক্টরের বড় স্ক্রিনে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে যখন এ কীর্তিমানের সংগ্রামী জীবন দেখানো হচ্ছিল তখন সেখানে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। সবাই প্রত্যক্ষ করছেন একজন মানুষের সংগ্রামময় জীবন যাতে মিশে আছে গভীর মর্মবেদনা, জীবনবোধ, দেশাত্মবোধ আর সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ। মূলত জীবনের চরম বিমর্ষ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, যার পরতে পরতে আছে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য ভাবনা। যে ভাবনা রুপালি জগতের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান থেকে তাকে নামিয়ে এনেছিল রাস্তায়, মানুষের কাতারে। আবার সেখান থেকে পরিণত হন একটি প্রতিষ্ঠানে।

১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু হয়। প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন। জীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। এ রকম একটা অবস্থায় অনেকেই যেখানে হতাশ হয়ে পড়েন, সেখানেই ব্যতিক্রম ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জীবনের বাকি দিনগুলো কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেন। আর কেউ যেন তাঁর মতো ভুক্তভোগী না হন সেজন্য প্রতিষ্ঠা করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামের একটি সংগঠন।

দুর্ঘটনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে নেমে পড়লেন রাস্তায়। তাকে দেখে মানুষও সচেতন হলো। সরকারও তাগিদ অনুভব করল। মানুষের মাঝে বাড়তে থাকল সচেতনতা। ২৫ বছর ধরে করে যাচ্ছেন এ কাজ। নেই ক্লান্তি, আছে একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর অন্যকে অণুপ্রাণিত করার রসদ। তার নেতৃত্বাধীন নিসচার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ বছর থেকে ২২ অক্টোবর দেশে পালিত হচ্ছে নিরাপদ সড়ক দিবস। সংগঠনটি জাতিসংঘেও প্রশংসিত হয়েছে। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন এ বছর পেলেন একুশে পদক সম্মাননা।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে শুভেচ্ছা জানাতে প্রীতি সম্মিলনে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী খুরশিদ আলম ও ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন, পরিচালক ড. মুজাহিদ, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব শফি বিক্রমপুরী, হাফিজ উদ্দিন, চিত্রনায়িকা রুজিনা, দিলারা, পপি, চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ, অমিত হাসান, জায়েদ খান, সঙ্গীত পরিচালক সৈয়দ হারুন, অ্যাডভোকেট মনজুর মোর্শেদ, ভারতীয় সাহিত্যিক মলয় চন্দন মুখোপাধ্যায়, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি রুস্তম আলী খান, মর্ডান হারবালের স্বত্বাধিকারী ডা. আলমগীর মতি, শ্রোতা সদস্যসচিব মো. সদরুল, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এ্যান্ড রিসার্চ এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক শফিক আহমেদ, নিসচা উপদেষ্টা এইচএম নোমান, নিসচার ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব, এলজিইডির প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী আকতার হোসেন, এডিবির পরামর্শক প্রকৌশলী দেওয়ান ও লিয়াকত আলী, ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমেদ প্রমুখ। যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিসচার যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ, সাদেক হোসেন বাবুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ। সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন নিসচার ভাইস-প্রেসিডেন্ট শামীম আলম দীপেন ও মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল।

বক্তারা বলেন, একটা সামাজিক আন্দোলন যে কত শক্তিশালী হতে পারে তার উদাহরণ ইলিয়াস কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই। সড়ককে নিরাপদ ও দূর্ঘটনা থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন তিনি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে সফল করতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথাও উঠে আসে। বক্তারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে একুশে পদকে ভূষিত করায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এ রকম একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় পদক প্রদান করায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠান নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইলিয়াস কাঞ্চনের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের একুশে পদকে ভূষিত করা হয় প্রতিবছর।

ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।