এবার মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গুর আশঙ্কা নেই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এবার মশার কামড় থেকে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের কোনো আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের গৃহীত ব্যবস্থা ও রোগ দমনে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কিত সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছর দেশে চিকুনগুনিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি কথাই বলতে চাই- এবার মহামারী তো দূরের কথা কোনো আশঙ্কাই নেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার। আমি স্যাটিসফাইড যে আমাদের জরিপটা ভালো হচ্ছে ও প্রস্তুতি ভালো আছে। ইনক্লুডিং আমাদের সিটি কর্পোরেশন। আমাদের দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতি আছে।’
এবার প্রচুর মশা দেখা যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাসিম বলেন, ‘সাধারণ মশার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। যতদিন পৃথিবী থাকবে মশা থাকবে। কামড়ও থাকবে।’ বলেই হেসে ফেলেন জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম।
সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘মশার কামড়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে আমাদের কাজ তখন শুরু হয়, তাদের চিকিৎসা দেয়া। সিটি কর্পোরেশন মশা মারবে। বাড়ির ভেতরে যেখানে-যেখানে মশা জন্মায় বাড়ির মালিককে তা পরিষ্কার রাখতে হবে।’
সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার কার্যক্রম তো আমাদের চোখে পড়ে না- একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘মশার লাস্ট স্টেজটা হচ্ছে উড়ন্ত মশা। এর আগে মশা তিনটি স্টেজ পানিতে অবস্থান করে। উড়ন্ত মশা হচ্ছে পূর্ণ বয়স্ক যুবক মশা। এটাকে এ পরিবেশে মারা একটু কঠিন। যেখানে মশার জন্ম হতে পারে সেই পানির ফ্লো যদি আমরা অব্যাহত রাখতে পারি আমি মনে করি ৭০ শতাংশ মশা জন্মগ্রহণই করবে না। এটি হচ্ছে আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কিছু ড্রেন আছে ঢাকা, সেখানে আমার যেতে পারছি না। এছাড়া ঢাকার আশপাশে অপরিকল্পিত ডোবা-নালা আছে, এ জায়গাগুলো থেকে মশার জন্ম হয়।’
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানতে চান- আপনাদের ওষুধটা কার্যকর কি-না। জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বলতে পারব না এ ওষুধটা কার্যকর কি-না। এটা সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করা হয়। আমরা তিনটি চারটা জায়গা থেকে ওষুধটা পরীক্ষা করি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে চিকুনগুনিয়া একবার হলে এটা আর ৪/৫ বছর আর হয় না। সেই হিসেবে আমরা চিকুনগুনিয়ার বড় ধরনের আউট ব্রেক আশা করছি না। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সারাবছরই কিছু না কিছু হচ্ছেই। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে, কারণ এটা খুব ভালোভাবে ম্যানেজড হচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রেও কোনো আউট ব্রেক হবে বলে মনে করছি না।’
সভায় জানানো হয়, ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিনটি জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পরপর এডিস মশার কীটতাত্ত্বিক জরিপ কাজ পরিচালনা করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন কিউলেক্স মশার হার বেশি। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ না করলে এককভাবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বেলাল বলেন, ‘মশা মারার ক্রাশ প্রোগ্রাম আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। জাতির জনক বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পালিত হবে। আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
এ সময় মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণের এ কাজটা ভালো, উত্তরও যদি এটা ফলো করে তবে ভালো হবে।
সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেডএ/জেআইএম