চাহিদা বাড়ছে পাটের তৈরি জুতা-ব্যাগের
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে চলছে পাটজাত পণ্যের মেলা। সেখানে পাটের তৈরি বাহারি সব পণ্য প্রদর্শনী এবং বিক্রি হচ্ছে। চোখ ধাঁনানো বাহারি সব রং আর ডিজাইনের তাক লাগানো পাটপণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণের স্টলগুলো।
এসব পাটজাত পণ্যর মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা, সেন্ডেল, শো-পিস, শপিং ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, পর্দা, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, মেয়েদের গহনা, সেন্ডেল, বেড কভার, কুশন কভার, সোফা কভার, পর্দা, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, ডোরম্যাট, শতরঞ্জি, পরিধেয় ব্লেজার, ফতুয়া, কটি, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য বহুবিধ এমন পাটপণ্য সামগ্রী।
তবে মেলায় আগত দর্শনার্থী ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল পাটের তৈরি জুতা আর ব্যাগের দিকেই বেশি। নানা রঙ আর ডিজাইনের ব্যাগ সংগ্রহ করেছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে ছিল পাটের তৈরি জুতার চাহিদা। এসব জুতা-সেন্ডেল, স্লিপার ফ্যাশানেবল হওয়ায় তরুণ-তরুণীর বিশেষ আকৃষ্ট হয়েছে।
গতকাল (৬ মার্চ) শুরু হওয়া এই পাট জাত পণ্যর মেলা চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। মেলায় স্টলগুলোতে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্টলে স্টলে ঘুরে পাটের তৈরি জিনিসপত্র দেখছেন দর্শনার্থীরা। সেইসঙ্গে পছন্দের পণ্যটি সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন তারা। ‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ - এই প্রতিপাদ্যের প্রতিফলন ঘটেছে মেলায়। মেলায় ৭৫টি স্টলে ১১২টি প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি করা পাটজাত পণ্য প্রদর্শন করছেন চলছে বেচা-কেনাও।
মেলায় পাট জাত পণ্যর জুতা বিক্রি করছে বারলপ ফুটওয়ার। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্তাধিকারী তোহা মোরর্শেদ বলেন, আমাদের তৈরি পাটের জুতা মূলত আমরা বিভিন্ন দেশে পাঠাই। দেশের বাহিরে এই পাটের জুতার বেশ কদর আছে। পাটের জুতা সম্পর্কে আস্তে আস্তে আমাদের দেশের মানুষও ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটা পরিবেশ বান্ধব। এটার ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ বুঝতে পারছে যে কারণে আলাদাভাবে চাহিদা তৈরি হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থী-ক্রেতারা পাটের তৈরি জুতা এসে নিজেরাই খোঁজ করছেন বলা যায় এক ধরণের চাহিদা তৈরি হয়েছে।
পাটের তৈরি জুতার আরেক স্টল বেকি সেটার। সেখানকার সেলস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা নিস্বর্গ আহমেদ বলেন, দেশের ৩ টি জায়গায় আমাদের ফ্যাক্টরি আছে আমরা মূলত এসব জুতা সেন্ডেল দেশের বাহিরে পাঠাই। তবে বর্তমান সময়ে দেশেও ব্যাপক এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। মেলায় সবাই এসে পাটের তৈরি জুতা খোঁজ করছে আমরাও বিক্রি করছি। এগুলো ফ্যাশানেবল হওয়ায় তরুণরাই বেশি আসছে। ২৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে জুতা-স্লিপার,সেন্ডেল বেশি বিক্রি হচ্ছে মেলায়।
অন্যদিকে ব্যাগের স্টল গোল্ডেন ফাইবার স্টলে কর্মরত আব্দুস সালাম জানান, মেলায় মূলত মেলায় স্টল নেয়া প্রচার প্রচারণার জন্য। কিন্তু মেলাতেও বেশ বেচা বিক্রি হচ্ছে। লেডিস ব্যাগের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আমরা বাহারি সব ডিজাইনের ব্যাগ, পার্স, ফ্যাশানেবল ব্যাগ আনার কারণে এগুলো ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর এগুলোর দামও নাগালের মধ্যে থাকায় অনেকেই কিনছেন। তবে এসবের প্রচার হলে এই পাটজাত পণ্যর খাত আরও এগিয়ে যাবে।
স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পাটজাত পণ্যের এই মেলায় এসেছেন রেহেনা খাতুন। তিনি বলেন, পাট দিয়ে এতো সুন্দর, ফ্যাশানেবল জিনিস তৈরি সম্ভব তা আমার আগে জানা ছিল না। মেলায় এসে পাটের দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও জুতা কিনলাম। দামও তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেকেই এসব কিনছেন। এছাড়া পাটের পণ্য বর্তমানে ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে।
পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের পাট পণ্য। বাংলাদেশের পাট বিশ্বের সেরা। পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পাট বহুমুখীকরণের ওপরে। দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন পাট পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
এএস/এমবিআর/এমএস