কীসের মশার কয়েল আর কীসের কী!

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৮

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল কবরস্থান রোডের বাসিন্দা মিনারা বেগম। দু’পা দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘মশার কামড়ের পর চুলকাতে চুলকাতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে টিকতে পারি না। এ বছরের মতো কোনো বছর এতো মশা দেখি নাই।’

এমন অভিযোগ আশপাশের এলাকার প্রায় প্রতিটি মানুষের। কিছুদিন ধরে ‘মশা’ হচ্ছে নগর যন্ত্রণার নাম। যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল দনিয়া, মেরাজনগর, পলাশপুর, জনতাবাগ, শ্যামপুর, কোনাপাড়া, সারুলিয়া, স্টাফ কোয়ার্টার ও শেখদী এলাকায় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মানুষ। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সন্ধ্যা পর মশার কামড়ে ঘরে-বাইরে কোথাও টেকা যায় না। কাজ হয় না মশার কয়েলেও। মশা মারতে সরকারি কোনো উদ্যোগও দেখেননি তারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্থানে ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ চলছে। এসব এলাকায় প্রচুর খোলা ড্রেন। মশার বংশবিস্তারের সহায়ক জলপূর্ণ খোলা প্রান্তও চোখে পড়ে এখানে। মাতুয়াইল, দনিয়া, শ্যামপুর, সারুলিয়া ইউনিয়ন সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

শনিরআখড়ার গোবিন্দপুরের সুবর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক অমূল্য চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘কয়েক রাত ধরে ঘুমাতে পারছি না মশার জ্বালায়। ৬০০ টাকা দিয়ে নতুন মশারি কিনেছি, সেটার মধ্যেও মশা ঢুকে যাচ্ছে। এতো মশা, মনে হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ৪/৫ গুণ বেশি। সন্ধ্যার পর দোকানেও বসা যাচ্ছে না, দেদার কামড়ায়, কীসের মশার কয়েল আর কীসের কী!’

তিনি আরও বলেন, ‘মশার অস্বাভাবিক বংশবিস্তারের বিষয়ে সরকার উদাসীন। আমরা কেবল সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাউকে কোনোদিন আমাদের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।’

মাতুয়াইলের খানবাড়ি চৌরাস্তার কাছে রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করেন সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার পিঠা বিক্রির সময় সন্ধ্যার পর। কিন্তু মশার কামড়ে টিকে থাকাই দায়! এতো মশা তো কোনোদিন দেহি নাই।’

ডেমরা হাজীনগরের গৃহিণী হ্যাপি আক্তার বলেন, ‘আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি এ এলাকায়। কিন্তু এতো মশা কোনোদিন দেখিনি। আমার মেয়ের বয়স প্রায় এক বছর। মশার কামড়ে বাচ্চার আবার অসুখ-বিসুখ করে কিনা- এজন্য সন্ধ্যার পরই বাচ্চা নিয়ে মশারির মধ্যে ঢুকে পড়ি।’

দনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুম্মন মিয়া বলেন, ‘আমার এরিয়ায় অতিরিক্ত মশা। মশারির ভেতরে থেকেও রক্ষা নেই। মশার পরিমাণ এতো বেশি যে কীভাবে ঢুকে যায়! মশা কামড় দিলে সেই স্থান লাল হয়ে যাচ্ছে এবং প্রচণ্ড চুলকায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার এলাকাবাসীর জন্য নিজের উদ্যোগে মশা মারার কিছু ওষুধ কিনেছি, মেশিনও কিনবো।’

জুম্মন মিয়া বলেন, ‘দনিয়া অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। মানুষও সচেতন নয়। যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে। ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলে তা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া এসব এলাকায় কোনোদিন মশার ওষুধ দেয়া হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে এখন মশার বিস্ফোরণ হয়েছে।’

আরএমএম/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।