নিবন্ধনের জন্য যোগ্য দল খুঁজে পাচ্ছে না ইসি
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেও ‘যোগ্য’ দল খুঁজে পাচ্ছে না ইসি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৭৬ দল নিবন্ধের আবেদন করলেও যাচাই-বাছাই করা কেউই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। কেউ কেউ দিয়েছেন মিথ্যা তথ্য। আর দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির গঠনতন্ত্র হুবহু নকল করে ধরা পড়েছে একটি দল।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে ৩০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দলের নিবন্ধন চাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু ইসির যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা বলছেন, এ পর্যন্ত বেশির ভাগ দলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা হলেও কেউই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। বাকিগুলোর যাচাই-বাছাই শেষ করে কাগজপত্র ঠিক থাকলে এ মাসেই মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাই করে নিবন্ধন দেবে ইসি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শুধু তথ্য উপাত্ত ভুল নয়। কোনো কোনো দলের নামও বিচিত্র। বাংলাদেশ ঘুষ নির্মূল পার্টি, বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস-বিজেসি, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ সততা দল, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ আলোকিত পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ প্রভৃতি নামে নিবন্ধন চেয়েছেন তারা। বিচিত্র নাম নিয়ে ইসির কোনো আপত্তি না থাকলেও শর্ত পূরণ করতে না পারায় আপত্তি তুলেছে ইসি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে । অথবা দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, অন্তত ২১টি প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে। তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে দলটি।
সূত্র জানায়, বিএনপির গঠনতন্ত্র হুবহু নকল করে নিজ দলের গঠনতন্ত্র বলে কাগজপত্র জমা দিয়েছে একটি দল। গঠনতন্ত্রের এক জায়গায় ভুলে বিএনপি নামটি মুছে নিজেদের দলের নামটি না বসানোয় ইসির দৃষ্টিতে এটি ধরা পড়ে। দলের গঠনতন্ত্রে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার কথা রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টিসহ (বিআইপি) কোন দলই তা পূরণ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইপি মহাসচিব মো. আবুল কাশেম সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ৩৩ ভাগ নারী সদস্য আওয়ামী ও বিএনপিতেই নেই। তবে আমরা নিবন্ধন পেলে এসব শর্ত পূরণ করব।
প্রতিটি উপজেলায় ২০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও সে তথ্য মেলেনি কোনো দলেরই। বিগত নির্বাচনে (নিবন্ধনের আগে) কত শতাংশ ভোট পেয়েছে তার কোনো উল্লেখ নেই বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ আলোকিত পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ (বিপিডিপি), লিবারেল পার্টি-এলপি, তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি, বাংলাদেশ সততা দল (বিএইচপি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ কোনো দলেরই। অন্য শর্তগুলোও পূরণ করতে পারেনি এসব দল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিবারেল পার্টি-এলপি, চেয়ারম্যান এইচএমএম ইরফান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তো কাগজপত্র দিয়েছি। হয়তো ইসি হারিয়ে ফেলেছে।
‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস-বিজেসি’নামে একটি নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। দলটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন নিজের যে ফ্ল্যাট বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন সেটাকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছেন। আবাসিক ভবনটি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার বিজয় সরণি টাওয়ার নামে পরিচিত। আর ‘নাকফুল বাংলাদেশ’ নামক দলের আবেদনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের দশম তলা। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নেই। যে কক্ষটিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে সেটি একটি তৈরি পোষাক কারখানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নিবন্ধনের আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫ হাজার টাকার ট্রেজারি চালান দেয়নি কোনো কোনো দল। প্রধান কার্যালয়ের অফিস মসজিদ দেখিয়েছে একটি দল। সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ গত বছরের ২৭ নভেম্বর ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছে। অথচ ওই দলটি আবেদন জমা দেয়ার মাত্র দুই দিন আগে দলের কার্যালয়ের জন্য ‘বাড়িওয়ালার’ সঙ্গে চুক্তি করেছে। জানা যায়, একটি দল তাদের ব্যাংকের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ১ হাজার টাকা। অথচ এ তথ্যও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষযে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম জাগো নিউজকে বলেন, নিবন্ধন চাওয়া দলগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে শর্ত পূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে নতুন আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে নিষিদ্ধ কিংবা জঙ্গি সম্পৃক্ত কোনো দল রয়েছে কি-না তা তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি। এ বিষেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কিছু জানায়নি।
এইচএস/ওআর/এমএস