ক্রেস্ট জালিয়াতি : তাজুলের অনিয়ম পায়নি সংসদীয় কমিটি!


প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধের সময় অবদান রাখা বিদেশিদের দেয়া সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির ঘটনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি সংসদীয় তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে ওই অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ চারজনকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত সংসদীয় সাব-কমিটির প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ বি এম তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নুরুন্নবী চৌধুরী ও কামরুল লায়লা জলি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংসদীয় সাব-কমিটির এই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

কমিটি সূত্র জানায়, ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে গত বছরের ২৪ এপ্রিল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাব কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য ডা. আফসারুল আমিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই সাব-কমিটিতে হুইপ ইকবালুর রহিম ও গাজী গোলাম দস্তগীরকে সদস্য রাখা হয়।

দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে গত ২৪ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাব কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তী বৈঠকে এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াই প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সাধারণত বৈঠকের কার্যপত্র কমিটির সকল সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেয়া হলেও এই প্রতিবেদনটি উপস্থিত সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া হয়নি।

ওই প্রতিবেদনে সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাশেম তালুকদার, উপ-সচিব ও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এসএম এনামুল কবির এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (শাখা সহকারী) আবুল কাশেমকে দায়ী করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য কামরুল লায়লা জলি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদনটি নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও পুরোটা পড়া সম্ভব হয়নি। আমরা সুপারিশগুলো দেখে প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

এ দিকে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার অনিয়ম ও অবেহলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে সম্মাননা অনুষ্ঠানের মাত্র দুই দিন আগে ক্রেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে এবং পরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার উপর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অনিয়মের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন।

এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো। এই তদন্ত প্রতিবেদন স্পিকারের কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেছে সাব-কমিটি। এছাড়া প্রতিবেদনে ক্রেস্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে চলমান আইনানুগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে তিন দফা বৈঠক করে সাব-কমিটি। বৈঠকে ক্রেস্ট সম্পর্কিত যাবতীয় কাগজ পরীক্ষা-নীরিক্ষার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাশেম তালুকদার ও মো. গোলাম রহমান মিয়াসহ অভিযুক্ত অন্য কর্মকর্তাদের তলব করা হয়। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য শোনেন।

সাব-কমিটির অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন, ঢাকার সাবেক বিভাগীয় কমিশনার এবং ওই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মো. জিল্লার রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহউদ্দীনের মতামত গ্রহণ করে।

এ ছাড়াও বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মো. মজিবর রহমান আল মামুন, পুলিশ সুপার (সিআইডি) শেখ মো. রেজাউল হায়দার, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফুল ইসলাম, ক্রেস্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এমিকনের প্রতিনিধি মীর দাউদ আহমেদ এবং মেসার্স মহসিনুল হাসানের মালিক মহসিনুল হাসানের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাতটি পর্যায়ে তিনটি ক্যাটাগরিতে ৩৩৮ জন বরেণ্য ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয়া হয়। কিন্তু ওই সম্মাননা ক্রেস্টে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম স্বর্ণ দেয়া হয়।

তাছাড়া রুপার পরিবর্তে পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত শংকর ধাতু দেয়ার অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সংসদ অধিবেশনেও বিষয়টি উত্থাপন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়।

এইচএস/এসকেডি/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।