শেরপুরের চরাঞ্চলে বাদাম চাষের নতুন সম্ভাবনা


প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৫

শেরপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীণ বাদাম চাষ এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। চরাঞ্চলের পতিত পড়ে থাকা জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত বারি চীনা বাদাম-৮ জাতের গ্রীষ্মকালীণ বাদাম চাষে বিঘাপ্রতি চার/পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে কৃষকরা ৩৫/৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। এটাকে কৃষকরা ‘ফাও ফসল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
 
কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশি জাতের বাদামের তুলনায় বারি চীনা বাদাম-৮ জাতের বাদামের সাইজ বড়, দানাগুলো বেশ পুষ্ট এবং পুষ্টিমান বেশি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। ফলনও হয় স্থানীয় জাতের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। সদর উপজেলার ভাগলগড়, কুলুর চর, ভাগলদী, নকলার নারায়ণখোলার চরাঞ্চলে চীনা বাদাম-৮ চাষ করে কৃষকরা একরপ্রতি শুকনা অবস্থায় প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মণ করে ফলন পেয়েছেন। বাজারে এবার বাদামের দামও বেশ ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

শেরপুর-জামালপুরের চরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন বারি চীনা বাদাম-৮ চাষে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্বুদ্ধকরণ করে যাচ্ছে জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বারির কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা বারি চীনা বাদাম-৮ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। শেরপুরের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলেও এ জাতের বাদামের চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে এখানকার চরাঞ্চলের চিত্রও পাল্টে যাবে। শেরপুর খামারবাড়ির হিসাব মতে, এবার শেরপুরে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন বাদামের আবাদ হয়েছে।

নকলার নারায়ণখোলা গ্রামের বাদাম চাষী মোয়াবিয়া মিয়া জানান, তার ৭৫ শতাংশ জমিতে আবাদ করা বারি চীনা বাদাম-৮ জাতের শস্য উত্তোলন করে শুকনা অবস্থায় বাদামের বিঘাপ্রতি ফলন মিলেছে ৩০ মণ করে। যা দেশি জাতের বাদামের তুলনায় প্রায় ৩/৪ গুণ বেশি। তিনি বলেন, আমার ওই জমিতে বাদাম চাষ করতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, আর আমি বাদাম বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়েও প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি। এই সময় ওই জমিতে কোনো আবাদ ফসল হতো না। এটা ফাও ফসল হিসেবে পেয়েছি।

আরেক বাদাম চাষী দেলায়ার হোসেন খান জানান, আগে আমি দেশি ‘ঢাকাই’ জাতের বাদাম আবাদ করতাম। কিন্তু এবার চীনা বাদাম-৮ আবাদ করে দেশি জাতের চাইতে ৩/৪ গুণ বেশি ফলন পাইছি। ভবিষ্যতেও আমি এই বাদাম চাষ করার চিন্তা করতাছি। স্থানীয় ইউপি সদ্য গোলাম মোস্তফা খান বলেন, গ্রীষ্মকালে আমাদের চরাঞ্চলে কোনো ফসল আবাদ হয় না। এই বাদামটা বারি চীনা বাদাম-৮ আসছে, এটা আমাদের এলাকার কৃষকদের জন্য খুবই লাভজনক ফসল। এটা হওয়াতে এলাকার কৃষকরা খুব লাভবান হচ্ছেন।

বারি চীনা বাদাম-৮ জাতটির উদ্ভাবক এবং জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মঞ্জুরুল কাদির জাগো নিউজকে বলেন, গ্রীষ্মকালীন আবাদ করা বারি চীনা বাদাম-৮ জাতটির বাদামের সাইজ বড়, দানাগুলো বেশ পুষ্ট এবং পুষ্টিমান বেশি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। ফলনও হয় স্থানীয় জাতের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা বারি চীনা বাদাম-৮ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া কৃষকরা এ জাতটি বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করেও অধিক লাভবান হতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের অন্যান্য এলাকার মতো শেরপুর-জামালপুরের চরাঞ্চলেও বারি চীনা বাদাম-৮ চাষের জন্য কৃষকদের মদ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রদর্শনী প্লট ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ করে যাচ্ছি। শেরপুরের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলেও এ জাতের বাদামের চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে এখানকার চরাঞ্চলের চিত্রও পাল্টে যাবে।

শেরপুর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ দিন দিন বাড়ছে। আমরা আশা করছি চরাঞ্চলের এ অঞ্চলের কৃষকরাও গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবেন।

হাকিম বাবুল/বিএ/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।