কমলাপুরে যাত্রীদের টয়লেট বন্ধ রেখে পাবলিক টয়লেট চালু
দুপুর পৌনে ১২টা, তড়িঘড়ি করে ট্রেনযাত্রী শফিকুল ইসলাম কমলাপুর রেল স্টেশনে প্রবেশ করেন। টিকিট চেকার টিকিট চেক করেন। এরপর টয়লেট খুঁজতে থাকেন তিনি। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের জন্য একমাত্র সরকারি টয়লেটটি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন শফিকুল। এ সময় ঘটনা বুঝতে পেরে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী দেখিয়ে দেন পাবলিক টয়লেটের পথ। শনিবার দুপুরে খোদ দেশের প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুরে এমনই চিত্র চোখে পড়ে।
দেশের প্রধান এ রেলস্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের জন্য থাকা একমাত্র টয়লেটটি বন্ধ। তবে আরও বেশ ক‘টি টয়লেট থাকলেও তা এসি ও কেবিন যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় উপেক্ষিত ৯০ শতাংশ যাত্রী। রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়ে, বোন ও ভাগ্নিকে নিয়ে গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়িতে যাব। স্টেশনে এসে মেয়ে ও বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছি। টয়লেট সুবিধা নেই। তাই টাকা দিয়ে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হলো। দেশের প্রধান স্টেশনে এমন বেহাল দশা মানা যায় না।
নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের যাত্রী আফসার উদ্দিন জানান, অধিকাংশ রুটের ট্রেন দেরিতে আসে ও দেরিতেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু যাত্রীরা ঝুঁকি না নিয়ে যথাসময়ে রেলস্টেশনে উপস্থিত থাকেন। দেরির কারণে অনেক যাত্রীকে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এখানে যা অবস্থা, একমাত্র টয়লেটটি বন্ধ। অন্য টয়লেটে ঢুকতে চাইলে এসি টিকিট দেখাতে বলেন দায়িত্বরত এক সদস্য।
দিনাজপুর রুটের একতা ট্রেনের যাত্রী রেজাউল করিম জানান, ভাড়া বাড়লেও সড়ক পথে ভোগান্তির কারণে রেলে যাত্রী বেড়েছে। টিকিটের দাম বাড়ানো হলেও বাড়েনি যাত্রী সুবিধা, বরং বলা যায় কমেছে।
দুপুর ২টার দিকে সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্রথম শ্রেণি, কেবিন ও এসির যাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা ওয়াশরুম, ওয়েটিং রুম ও টয়লেট সুবিধা। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার রয়েছে মাত্র একটি। উৎকট গন্ধ পুরো রুমে। একজন মাত্র সেই কক্ষে বসে আছেন। সেখানে টয়লেট আছে মাত্র একটি, সেটিও বন্ধ। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত পরিচ্ছন্নতা কর্মী রুহুল আমিন জানান স্যুয়ারেজ লাইনে সমস্যার কারণে পয়ঃনিষ্কাশন বন্ধ। সে কারণে টয়লেটটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিক কবে এ সমস্যার সমাধান হবে জানি না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
৮নং প্লাটফর্মের পাশে স্টেশনের স্যানিটেশন ইন্সপেক্টর আরিফুর রহমানের কার্যালয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি সেখানে নেই। নিজ কক্ষে নেই প্লাটফর্ম স্টেশন মাস্টারও।
এ সময় অপর এক মহিলা পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানান, সরকারি টয়লেট বন্ধ। তবে ঠিকই চালু আছে পাবলিক টয়লেট। সেখানে ৫ টাকা ও ১০ টাকার বিনিময়ে প্রসাব-পায়খানা করার সুবিধা পাচ্ছেন যাত্রীরা। তিনি অভিযোগ করেন কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে সরকারি টয়লেট বন্ধ রেখে ব্যবসায়িকভাবে পাবলিক টয়লেট চালু করেছে। পরে স্যানিটেশন ইন্সপেক্টর আরিফুর রহমান জানান, আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও স্যানিটেশন সুবিধা অপ্রতুল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কমলাপুল রেলস্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন জানান, স্টেশনে যাত্রীদের স্যানিটেশন সুবিধা পর্যাপ্ত। সাধারণ যাত্রীদের টয়লেট বন্ধ নেই। এ সময় সরকারি টয়লেট বন্ধ ও পাবলিক টয়লেট চালু রাখার ছবি দেখানো হলে তিনি বলেন, সাধারণ যাত্রীদের জন্য একটি মাত্র টয়লেট। বাকি সব টয়লেট এসি ও কেবিন যাত্রীদের জন্য। সাধারণ যাত্রীদের স্যানিটেশন সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেইউ/এমএমজেড/ওআর/আরআইপি