এমপিপুত্র রনির বিরুদ্ধে চার্জশিট আজ
রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলায় এমপিপুত্র রনির বিরুদ্ধে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে। জোড়া খুনের এ ঘটনায় তিন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৩৫ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে। এছাড়া আলামত হিসেবে দাখিল করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রনির পিস্তল এবং গুলি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস বলেন, ইতোমধ্যেই চার্জশিট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চার্জশিট মঙ্গলবার (আজ) আদালতে দাখিল করা হবে।
বখতিয়ার আলম রনির মা পিনু খান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির কোনো ক্লু ছিলো না উল্লেখ করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, তিন মাসেরও কম সময়ে এ মামলার তদন্ত শেষ করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যেই এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান আসামি রনির তিন বন্ধু কামাল মাহামুদ, মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর আলম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই রাতে ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী রনির গাড়িচালক ইমরান ফকিরও জবানবন্দি দিয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর রনির কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্রের গুলি এবং নিহতদের একজনের শরীর থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি মিলে যাওয়ায় সিআইডি ব্যালাস্টিক রিপোর্টে ওই অস্ত্রে খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর ফলে এ ঘটনাটি প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে রয়েছে।
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে (পৌনে ২টা) সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি যানজটে আটকে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার একপর্যায়ে চালকের পাশের আসনে বসে থাকা নেশাগ্রস্ত রনি বিরক্ত হয়ে তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে গুরুতর আহত হন রিকশাচালক হাকিম ও দৈনিক জনকণ্ঠের সিএনজিচালক ইয়াকুব। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এ ঘটনায় ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় রিকশাচালক হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম মামলা করেন । এ মামলার তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও ঘটনাস্থলের কাছের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ থেকে ছবি পাওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ কালো রঙের একটি প্রাডো গাডি (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) শনাক্ত করে। ওই গাড়িটি ইস্কাটন এলাকায় দুবার বেপরোয়া চলাচল দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। পরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে গাড়িটির মালিক সংসদ সদস্য পিনু খান বলে নিশ্চিত হয় তদন্ত কর্কর্ারা।
প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার পর ৩১ মে গোয়েন্দা পুলিশ প্রথমে বখতিয়ার আলম রনির গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রাতের বিষয়ে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দা পুলিশ।পরে ওই দিনই সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনিকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে তার লাইসেন্স করা সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের পিস্তল ও ২১ রাউন্ড গুলি জব্দ করে। তিন দফায় ১১ দিনের রিমান্ডে নিয়েও গোয়েন্দা পুলিশ বখতিয়ার আলম রনির কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি। গ্রেফতারের পর সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রয়েছেন।
এসআইএস/এমএস