বন্ধুত্বে শুরু প্রতারণায় শেষ
মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় একটি চাকরির পরীক্ষা দেয়ার সুবাদে মোবাইল ফোনে পরিচয়। এরপর মুঠোফোনে কথোপথন। দুই মাসের মধ্যে ফেসবুকে যোগাযোগ। এরপর বন্ধুত্ব রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। দুই মাসে তাদের দেখাও হয় তিনবার। সর্বশেষ দেখা গত শনিবার বিকেলে। প্রতারণার শুরু ও সম্পর্কের শেষ সেদিন রাতেই।
জন্মদিনের কথা বলে দাওয়াত দেয় কথিত প্রেমিক রাজিব আহম্মেদ (২৮)। দাওয়াতে সাড়া দিয়ে বিকেলে বনানী স্টার কাবাবের সামনে আসেন তরুণী। রিক্সাযোগে বনানী ডি ব্লকের ১৫ নং সড়কের ৬৫ নং বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ওই বাসায় আরেক বন্ধু রুবেল হোসেনের সহযোগিতায় জোরপূর্বক আটকে রেখে নির্যাতনের পর ওই তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ করে রাজিব।
বন্ধুত্বে শুরু হওয়া সম্পর্কের ইতি ঘটে প্রতারণায়। এখানেই শেষ নয়, সকালে ওই তরুণীকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, কাউকে জানালে খুন করে ফেলব। তবে কৌশলে রাতেই বিষয়টি খালাতো ভাই মাসুদ রানাকে জানান ওই তরুণী। রাতভর ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী পরদিন ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে সব ঘটনা খুলে বলেন। খালাতো ভাই মাসুদ হিউম্যান রাইটস মনিটরিং অর্গানাইজেশন নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সব খুলে বলেন।
এরপর সংগঠনটির ডাইরেক্টর (ইনভেস্টিগেশন) মোহাম্মদ জিয়াউল হাসানসহ ওই তরুণী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর ওসি বি এম ফরমান আলীর নির্দেশে একটি টিম অভিযুক্তদের আটক করতে অভিযান চালায়। দুপুর ১টার দিকে গুলশান ২ থেকে প্রথমে রুবেল ও বিকেল ৪টার দিকে গুলশান-১ নাভানা টাওয়ারের সামনে থেকে আটক করা হয় মূলহোতা রাজিব আহম্মেদকে।
বনানী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার দারিয়াপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাজিব। বনানী ১৭ নং রোডে আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। অপর সহযোগী বরিশাল জেলার মুলাদীর জরডিগ্রী গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে রুবেল হোসেন। তিনি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মাটিকাটা এলাকায় এ/পি ২০/১ বাসায় থাকেন।
আপোসের ফাঁদে ফেলে গ্রেফতার ‘ধর্ষণের মূলহোতা রাজিব’
রুবেল আটকের খবর পেয়ে গা ঢাকা দেয় ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রাজিব আহম্মেদ। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুলিশ তাদের খুঁজতে থাকে। সর্বশেষ হিউম্যান রাইটস মনিটরিং অর্গানাইজেশনের মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে আপোস করার প্রস্তাবের ফাঁদ পাতেন। ৪০ হাজার টাকা আপোসের প্রস্তাবে দেখা করতে রাজি হয় রাজিব। তবে শর্ত থাকে পুলিশকে জানানো যাবে না। এরপর বিকেল ৪টার দিকে গুলশান-১ নাভানা টাওয়ারের সামনে আসলে পুলিশ মূলহোতা রাজিব আহম্মেদকে আটক করে।
অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় আলামত পরীক্ষার জন্য ওই তরুণীকে সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী। বনানী থানা পুলিশ জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতনের ৯(৩) ধারায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করছেন থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন রানা। মামলা নং ৩। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন রানা জাগো নিউজকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রথমে আমরা অভিযুক্ত রাজিব আহমেদ (২৮) ও রুবেল হোসেনকে (২৭) আটক করি। এরপর রাতে তাদের কথায় প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ করি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃতরা। বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার রাজিব ও রুবেলের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে দু’জনকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব রিমান্ড শুনানির জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠান।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বোরহানউদ্দিন আদালতে কেস ডকেট দাখিল না করায় আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন।
জেইউ/ওআর/এমএস